হাওর নিয়ে লেখায় বন্ধুদের আগ্রহে উৎসাহিত হয়ে আরো একটা Post দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা। আমার ছোট বেলার দেখা হাওর এবং হাওর পারের জনপদের জীবনযাত্রার সাথে বর্তমানের বিস্তর ফারাক।
সেই ঘর এখনো আছে, কিন্তু এখন আর ঘর হতে নীরব রাতে আষাঢ় শ্রাবণে ঢেউ এর আছড়ে পরার শব্দ শুনা যায় না। মূলত স্থানে স্থানে বঁাধ দেয়ার কারণেই এই প্রভাব। হিজল করচের বন উজার হয়েছে। কয়েকটি মাছ আগে খুব বেশী পাওয়া যেতো, আজকাল দেখাই যায় না , বিশেষ করে ঘইন্যা মাছ।
বর্ষায় আড়াআড়ি হাওর পারি দেয়া সুবিধাজনক, তাই বিয়ে শাদি হত বর্ষাকালে। হাওর দিয়ে যাওয়া বর কনের পাল তোলা নৌকায় ভেসে আসতো মাইকে আব্দুল আলিমের দরাজ কণ্ঠের গান অথবা আরতী ধরের হাসন রাজার গান। পাল তোলা, গুনে টানা অথবা দাড় বেয়ে নৌকা তো এখন শুধু মাত্র স্মৃতি।
আমার কানে এখনো বাজছে -
কেহ করে বেচা কেনা, কেহ কান্দে, রাস্তার পরে ধরবে যদি তারে, দয়াল মুর্শিদের বাজারে।
পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।
মাটির পিঞ্জিরারার মাঝে বন্দী হইয়া রে, কান্দে হাসন রাজার মন ময়না রে।
৭০ এর দশক পর্যন্ত আরতী ধর ছাড়া আর কারো কন্ঠে হাসন রাজার রেকর্ড করা গান শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।
হাওর এলাকা এই এলাকায় ভাটি এলাকা বলেই পরিচিত। ভাটি এলাকার একেবারেই নিজস্ব সংস্কৃতি যা বাংলার অন্য কোন এলাকায় আছে কিনা আমার জানা নেই, তা হল বিয়ে বাড়ির ধামাল গান। এ নিয়ে আমার নিজের বাল্যের স্মৃতি অত্যন্ত মধুর। এই এলাকারই বৈষ্ণব সাধক কবি রাধারমন দত্তের অজস্র গানই ছিল ধামাল গানের ভান্ডার। পল্লী গ্রামে প্রতিটি বিয়ের আগে এবং পরে গ্রামের কিশোরী এবং বধুদের নির্মল আনন্দের উপকরণ ছিল ধামাল গেয়ে এবং নেচে রাত্রি উজার করে দেয়া। বাদক দলের সানাই, ঢাক, ক্লারিয়োনেট (আরো নাম না জানা পিতলের বঁাশী জাতীয় বাদ্য।) সহযোগে সূরের ছন্দে ছন্দে গীত গেয়ে গেয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে এই ধামাল গান গাওয়া হতো।
গবেষক এবং গুণী সংগীত শিল্পী বিশ্বজিত রায়ের ঐকান্তিক এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই বিলুপ্ত প্রায় ধামাল গান নাগরিক শ্রোতাদের কদর পাচ্ছে। এদেশের একাধিক টিভি চ্যানেল ছাড়াও পশ্চিম বঙ্গের তারা চ্যানেলে তঁার program এই ধামাল গানকে ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে। 'আমি রব না রব না ঘরে বন্ধু বীনে পরান বাচে না।' ছিল প্রতি অনুষ্ঠানে গীত common ধামাল গান।
এই ভাটি এলাকায় জন্ম নিয়ে তঁাদের মহৎ সৃষ্টি দ্বারা ভাটি এলাকা এবং সমগ্র বাংলা সংস্কৃতিকে গৌরবান্বিত করেছেন কত সাধক, বাউল, মরমী কবি। হাসন রাজা, রাধারমন দত্ত, দুরবিন শাহ, শাহ আব্দুল করিম আরো কতো মহাপুরুষ। ৬০ ও ৭০ এর দশকের আকাশবাণী কলকাতার leading পল্লী গীতি গায়ক নির্মলেন্দু চৌধুরীর জন্মস্থান এবং বেড়ে ওঠা আমার নিজের থানার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের বেহেলী গ্রামে।
পশ্চিম বঙ্গের ব্যান্ড দল দোহারের মূল শিল্পী কালিকা প্রসাদ শিলচরের লোক বলেই পারিবারিক আবহ হতেই ভাটি অঞ্চলের গানে আগ্রহী হয়েছেন বলে আমার ধারণা। তঁার মা, কাকীমারা হয়তো ধামাল গান গেয়েছেন।
শাহ আব্দুল করিমের বসতভুমি যে ধল গ্রামে, তা তো বর্ষায় সম্পূর্ণ হাওর বেষ্টিত। তঁারই জনপিŸয়গান একটি আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। কীর্ত্তন, পালাগান, যাত্রা পালা শুনে রাত কাবার করার অভিজ্ঞতা এখন শুধুই সুখকর স্মৃতি। ভাওয়াল সন্ন্যাসী, সাধক রামপ্রসাদ, নিমাই সন্ন্যাসী, সোহরাব রুস্তম, সিরাজ উদ্দৌলা ছিল তখনকার সবচাইতে জনপ্রিয় যাত্রাপালা।
সেই ঘর এখনো আছে, কিন্তু এখন আর ঘর হতে নীরব রাতে আষাঢ় শ্রাবণে ঢেউ এর আছড়ে পরার শব্দ শুনা যায় না। মূলত স্থানে স্থানে বঁাধ দেয়ার কারণেই এই প্রভাব। হিজল করচের বন উজার হয়েছে। কয়েকটি মাছ আগে খুব বেশী পাওয়া যেতো, আজকাল দেখাই যায় না , বিশেষ করে ঘইন্যা মাছ।
বর্ষায় আড়াআড়ি হাওর পারি দেয়া সুবিধাজনক, তাই বিয়ে শাদি হত বর্ষাকালে। হাওর দিয়ে যাওয়া বর কনের পাল তোলা নৌকায় ভেসে আসতো মাইকে আব্দুল আলিমের দরাজ কণ্ঠের গান অথবা আরতী ধরের হাসন রাজার গান। পাল তোলা, গুনে টানা অথবা দাড় বেয়ে নৌকা তো এখন শুধু মাত্র স্মৃতি।
আমার কানে এখনো বাজছে -
কেহ করে বেচা কেনা, কেহ কান্দে, রাস্তার পরে ধরবে যদি তারে, দয়াল মুর্শিদের বাজারে।
পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।
মাটির পিঞ্জিরারার মাঝে বন্দী হইয়া রে, কান্দে হাসন রাজার মন ময়না রে।
৭০ এর দশক পর্যন্ত আরতী ধর ছাড়া আর কারো কন্ঠে হাসন রাজার রেকর্ড করা গান শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।
হাওর এলাকা এই এলাকায় ভাটি এলাকা বলেই পরিচিত। ভাটি এলাকার একেবারেই নিজস্ব সংস্কৃতি যা বাংলার অন্য কোন এলাকায় আছে কিনা আমার জানা নেই, তা হল বিয়ে বাড়ির ধামাল গান। এ নিয়ে আমার নিজের বাল্যের স্মৃতি অত্যন্ত মধুর। এই এলাকারই বৈষ্ণব সাধক কবি রাধারমন দত্তের অজস্র গানই ছিল ধামাল গানের ভান্ডার। পল্লী গ্রামে প্রতিটি বিয়ের আগে এবং পরে গ্রামের কিশোরী এবং বধুদের নির্মল আনন্দের উপকরণ ছিল ধামাল গেয়ে এবং নেচে রাত্রি উজার করে দেয়া। বাদক দলের সানাই, ঢাক, ক্লারিয়োনেট (আরো নাম না জানা পিতলের বঁাশী জাতীয় বাদ্য।) সহযোগে সূরের ছন্দে ছন্দে গীত গেয়ে গেয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে এই ধামাল গান গাওয়া হতো।
গবেষক এবং গুণী সংগীত শিল্পী বিশ্বজিত রায়ের ঐকান্তিক এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই বিলুপ্ত প্রায় ধামাল গান নাগরিক শ্রোতাদের কদর পাচ্ছে। এদেশের একাধিক টিভি চ্যানেল ছাড়াও পশ্চিম বঙ্গের তারা চ্যানেলে তঁার program এই ধামাল গানকে ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে। 'আমি রব না রব না ঘরে বন্ধু বীনে পরান বাচে না।' ছিল প্রতি অনুষ্ঠানে গীত common ধামাল গান।
এই ভাটি এলাকায় জন্ম নিয়ে তঁাদের মহৎ সৃষ্টি দ্বারা ভাটি এলাকা এবং সমগ্র বাংলা সংস্কৃতিকে গৌরবান্বিত করেছেন কত সাধক, বাউল, মরমী কবি। হাসন রাজা, রাধারমন দত্ত, দুরবিন শাহ, শাহ আব্দুল করিম আরো কতো মহাপুরুষ। ৬০ ও ৭০ এর দশকের আকাশবাণী কলকাতার leading পল্লী গীতি গায়ক নির্মলেন্দু চৌধুরীর জন্মস্থান এবং বেড়ে ওঠা আমার নিজের থানার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের বেহেলী গ্রামে।
পশ্চিম বঙ্গের ব্যান্ড দল দোহারের মূল শিল্পী কালিকা প্রসাদ শিলচরের লোক বলেই পারিবারিক আবহ হতেই ভাটি অঞ্চলের গানে আগ্রহী হয়েছেন বলে আমার ধারণা। তঁার মা, কাকীমারা হয়তো ধামাল গান গেয়েছেন।
শাহ আব্দুল করিমের বসতভুমি যে ধল গ্রামে, তা তো বর্ষায় সম্পূর্ণ হাওর বেষ্টিত। তঁারই জনপিŸয়গান একটি আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। কীর্ত্তন, পালাগান, যাত্রা পালা শুনে রাত কাবার করার অভিজ্ঞতা এখন শুধুই সুখকর স্মৃতি। ভাওয়াল সন্ন্যাসী, সাধক রামপ্রসাদ, নিমাই সন্ন্যাসী, সোহরাব রুস্তম, সিরাজ উদ্দৌলা ছিল তখনকার সবচাইতে জনপ্রিয় যাত্রাপালা।
No comments:
Post a Comment