Sunday 4 December 2016

শুদ্ধ প্রকল্প ---------------------------------------পলাশকান্তি বিশ্বাস

শুদ্ধ প্রকল্প
--- পলাশকান্তি বিশ্বাস
ব্যাংক বলে টাকা নেই, এটিএম বন্ধ।
ফিসফিস, গুঞ্জন, ফিশিফিশি গন্ধ।
কার ঘাড়ে কোপ প’ল, পোয়াবারো কার ?
কেউ বলে ত্রাহি ত্রাহি--- এবারটি ছাড়।
কেউ বলে ঠিক ঠিক, কেউ বলে ধিক !
কারো ক্ষতি কম কিছু, কারো বা অধিক।
কেউ বলে, মেনে নিই কিছু লোকসান
অসাধুর ঘরে যত পাহাড়-প্রমাণ
কালাধন গচ্ছিত, হোক উদ্ধার --
ঘুরপথে জোটে যদি কিছুটা আমার।
অসাধু মুচকি হাসে, কচুপোড়া খা গে,
পোড়া যে কপাল তোর, সামলে নে আগে।
ভাবিস আমার কথা কিছুদিন গেলে--
আমি তো খাচ্ছি মাছ ভেজে মাছ-তেলে।
ছিল বা কতটা তোর ? --- তিন-আনি পাই !
তাই নিয়ে কেঁদে যাস ধানাই পানাই ।
আমি তো কোটির শোক করিনি কখনো,
আসলে তো মাটি সব যেভাবেই গোনো।
ঝটকায় গেল যেটা ঝটকাতে আসবে
তোদের মতন কিছু অকারণে ফাঁসবে।
এটিএম, পেটিএম, প্লাস্টিক মানি
মন্ত্রীর পেটে যা তা সবকিছু জানি।
মগজটা ট্যাড়া তাঁর, ‘সাফা সাফা’ বলে
মাঝরাতে ঝ্যাঁটা হাতে ঘোরে জঙ্গলে।
ময়লা বা ছেঁড়া-ফাটা নকলি বা কালো
হঠাৎ ইচ্ছে, সাইক্লিং বিনে ঢালো
সব শ্বেত-পারাবত শান্তি-আকাশে
যে পারো যতটা ধরো, নয় মরো ত্রাসে।
আমরা দিব্যি আছি বড় বেওসায়ী,
হা-ঘরে জনতা রাতারাতি ধরাশায়ী।
ইন্ডিয়া শাইনিং চিরকাল রবে
ভাবি, ওহে ভারতীয়, তোদের কী হবে।
তোরা থাক তোরা হয়ে, থাক কুঁড়েঘরে
আমরা আমরা থাকি আকাশশহরে।
প্রোমোটার তাল বুঝে খেদাল শ্রমিক,
রেস্তোরাঁ মাড়ায়না প্রেমিকা-প্রেমিক।
টাকা আছে, টাকা নেই মুশকিল ধাঁধা!
একশো’র পায়ে পড়ে দুহাজারি দাদা।
কোথা কালো, কোথা সাদা, কে বেড়ায় মেপে!
বাজারের গলা যেন ধরেছে কে চেপে!
ক্রেতা নেই বলে কাঁদে দোকানি-বাজারি
ক্রেতার কাতরধ্বনিঃ আছে দু-হাজারি!
হাজারপকেটী নেতা ফুলোচ্ছে গাল
আহা কী নেতা রে আমি, তিল থেকে তাল
তাল কেটে বেপরোয়া গমক-ঠমক
দ্যাখো রে দ্যাখো রে চাল, বেতাল-চমক!
ছত্রিশ ইঞ্চির বুক ঠুকে মন্ত্রীঃ
মিথ্যে চেঁচাও বাপু জন-গণতন্ত্রী !
প্রধান করলে যদি, সব সিদ্ধান্ত
আমাকেই নিতে দাও, থাকো চুপ শান্ত।
বিদেশে যা গচ্ছিত আনিব রে দেশে
বলে বলে শেষমেশ গিয়েছি তো ফেঁসে।
বিদেশের পারিনি যা, দেশের তো পারি!
কিরকম ভেবে ভেবে সকলের হাঁড়ি
হাটের মাঝারে এনে ফাটিয়ে দিলাম !
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলো সবে, বলো রাম রাম।
বেওসায়ি বেরাদার--- তাদের যা ঋণ
আগেই মকুব আহা, পথ মসৃণ।
বেকুব জনতা, বাছা, পঞ্চাশ দিন
থাক না সিকিটা খেয়ে প্রতিবাদহীন।
এমনি তো আধপেটা সারাটি বছর;
কটা দিন দেশপ্রেমে--- মরেও অমর।
দেখিস না কিরকম সীমান্তে-মাঠে
শ্রমিক-সেনারা সব বেমালুম খাটে !
দেশপ্রেম খাঁটি কিনা বোঝা যায় কিসে?
নেতার আদেশে যদি মুখ দাও বিষে
তবেই তো খাঁটি তুমি, মিনিমিনি পুষি!
দেশপ্রেমে ভোট বাড়ে, আমরাও খুশি।
সীমান্তে মরে সেনা বিনা প্রতিবাদ
তোমরাও নাও যদি তার কিছু স্বাদ
তবে তো পূর্ণ হয় ষোল-বিশ কলা
না হলে মহান দেশে কমে শৃঙ্খলা ।
শৃঙ্খলা শৃঙ্খল যত বাড়ে, বেশ তো
শাসকের ঘুম জমে, বাড়ে কিছু রেস্তও।
এতকাল মনে মনে যা রেখেছি পুষে
নিন্দুকে বলে কি না সব রাক্ষুসে!
ঘরে ঘরে ফেরি করি দেশপ্রেম-খেলা
অবোধ বোঝে না কিছু, শুধু অবহেলা।
সেনা পাক, পাকসেনা বলি যতবার
দেশজুড়ে হাততালি, ভাবের জোয়ার।
সে জোয়ার-মন্থনে তুললে মাখন
তোদের কি এসে যায়?--- বড় জ্বালাতন!
কিছু জ্বালা সকলের হবে সেটা জানা
তাবলে প্রেমের মালা, ভেট-নজরানা
স্বদেশ ও বিদেশের শিল্পপতিরা
দিচ্ছে যা নেব না কি? সব শিরঃপীড়া
বলে দূরে ছুঁড়ে দেব, নেব না গলায়
শুধু কি গরীব ভজে থাকব তলায়?
ভুবন তো গ্রাম এক। সে গ্রামের যত
ধনী আছে ডাক পাড়ি প্রেমসম্মতঃ
ভাইয়োঁ বহনোঁ, আনো তোমাদের ধন
আমাদের দেশে ঢালো বীজের মতন
কোটি কোটি লোক আছে – সোনাফলা মাঠ
দশগুণ ফিরে পাবে, বিনা বিভ্রাট।
প্রাচীনসভ্য, বড় উদার প্রজাতি
একবার কর যদি ছোট খয়রাতি
আজীবন কৃতজ্ঞ বংশানুক্রমে
তোমারো মুনাফা দ্যাখো কত ওঠে জমে।
বেওসার নামে করো শোষণ-শাসন
পদেপদে নাফা, নেই বিরোধাচরণ।
আমিও মসীহা বেশ, নয়া অবতার
মন-কি-বাত ধর্ম করছি প্রচার
আধুনিক যুগ, হতে হবে আধুনিক,
নোট ছেড়ে দ্রুত ধরো মানি প্লাস্টিক।
এটিএম, পেটিএম, স্মার্টফোন ধরো
ডিজিটাল হয়ে বাঁচো, ডিজিটাল মরো।
স্লোগানে স্লোগানে ভরি দেশের বাতাস
ও আমার ভাই-বোন নাও নয়া শ্বাস
গ্লোবাল ভিলেজ মানে বহু সম্ভাবনা
যুবক যুবতী পাবে হাতে হাতে সোনা
রামরাম নামে করি স্বপ্নের ফেরি
মাঝে মাঝে হুঙ্কার— বাজে রণভেরি
আমার স্বদেশ জেনো স্বভাবে মহান
অতিথিকে দেব ভাবি, দেব সে প্রমাণ।
নাও বাবা লুটে নাও ধন-মান-প্রাণ
গরীব না থাকে দেশে--- ধৌত শ্মশান।
স্বচ্ছতা-অভিযান শুদ্ধ প্রকল্প,
হাজার বছর পরে শোনাবে তা গল্প।
.....................

2 comments:

  1. এটা খুব আনন্দের খবর যে বাংলার মুখ আমার একটা কবিতা প্রকাশ করেছে। সম্পাদকের কাছে আমার ঋণ রয়ে গেল।ব্লগজিনটা দীর্ঘজীবী হোক।

    ReplyDelete
  2. এটা খুব আনন্দের খবর যে বাংলার মুখ আমার একটা কবিতা প্রকাশ করেছে। সম্পাদকের কাছে আমার ঋণ রয়ে গেল।ব্লগজিনটা দীর্ঘজীবী হোক।

    ReplyDelete