Monday 28 March 2016


যাদবপুর, সংগ্রাম, শিরদাঁড়া , ভাষা ও অধিকার

by hajarduar
নতুন দিল্লি থেকে যাকে পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যকে "পালন" করতে পাঠানো হয়, তিনি কেন রাজ্যের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত, এটা আমার কখুনো বোধগম্য হয়নি। বিশ্বের যেসব এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আসলেই উত্কর্ষ-কেন্দ্র, অর্থাৎ অন্যে সেই উত্কর্ষের স্বীকৃতি দেয়, উত্কর্ষ-কেন্দ্র বলে ফলক লাগানোর মতো নির্লজ্জ লোক-হাসানো কাজ করা হয় না, সেখানে কিনতু প্রায় কোন ক্ষেত্রেই এইরকম কোন একটি সরকারী ব্যক্তিকে এই ধরনের পদে রাখা হয় না। কিনতু টাকা যে সরকার দেয়? সে তো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও সরকারই  টাকা দেয়।  কারণ এটা সরকারী দায়িত্ব। বার্কলি শহরে স্থিত ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চলে মূলতঃ সরকারী অনুদানে। তার প্রধান কিনতু নিকোলাস ডার্ক্স নামের এক স্বনাম-ধন্য অধ্যাপক এবং শিক্ষাবিদ। তিনি দক্ষিন এশিয়া নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। এই পদ পেতে তাঁকে  কোন মন্ত্রীর পিএইচডি গাইড হতে হয়নি।   ঠিক যেমন মানুষ খেতে পারছে কিনা, সেটা দেখা সরকারী দায়িত্ব। চালে ভর্তুকি দেওবার কারনে সরকার ঠিক করে দিতে পারে না যে সে চাল কবে, কখন, কিভাবে মানুষ রাধবেন, কি ভাবে খাবেন। ঠিক যেমন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়ার কারণে, সরকারী ডাক্তারের মাইনে  দেওয়ার কারনে রাষ্ট্র ঠিক করে দিতে পারে না রুগীর চিকিত্সা কি ভাবে হবে, রোগ নির্ণয় কেমন করে হবে, কোন কোন রোগ নির্ণয় হবে, আর কোন কোন রোগ নির্ণয় হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দেওয়ার কারণে সরকারী হস্তক্ষেপ ঠিক একই রকম অনধিকার প্রবেশ।
এই বাংলার রাজ্যপাল, উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত কেশরিনাথ ত্রিপাঠি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি ঘটেছে, তা নিয়ে কৈফিয়ত চাইতে উপাচার্য্য এবং স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সুরঞ্জন দাসকে ডেকে পাঠান। বাংলা ও বাঙ্গালীর মান রেখে অধ্যাপক দাস বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতার "অপরাধে" অপরাধী ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুধ্যে পুলিশে নালিশ করেননি। এই বর্ধমানে ও কলকাতায়  অন্যত্র স্তাবকতার যুগে যাদবপুরের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিরদাঁড়ার অস্বিত্ব জানান দেবার কারণে উপাচার্যের আমাদের থেকে সাধুবাদ প্রাপ্য।
এই শিরদাঁড়ার কিয়দংশ যদি তাঁর আগে এই তৃণমূল আমলের সেই উপাচার্যের থাকত যিনি পুলিশ আনিয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের পেটানোর ও যৌন লাঞ্চনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন , তাহলে সেই অন্ধকার দৃশ্য আমাদের দেখতে হত না। এই শিরদাঁড়া একটু ধার পেলে বামফ্রন্ট আমলে এই যাদবপুরেরই আর এক উপাচার্য্য ২০০৫-এ অনশনরত প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের পুলিশ দিয়ে পেটানোকে রুখতেন। এগুলোর একটাও আমরা ভুলিনি। তাই যখন দেখা যায় যে পুলিশ দিয়ে ছাত্র পেটানোর রাজনৈতিক কুশিলবরা দিল্লিতে গিয়ে সংহতি জানাচ্ছেন, আমাদের হাসি পায়। আবার ভয়ও লাগে।
কেশরিনাথ ত্রিপাঠি সম্প্রতি বলেছেন যে যাদবপুরের ব্যাপারটি শেষ।  এইবার লেখাপড়া  হোক।  দিল্লি-প্রেরিত আচার্য্যের নির্দেশের অপেক্ষায় কখুনো বসে থাকেনি নিখিল বাংলাদেশের গর্ব এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।  এই বছরই প্রকাশিত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গবেষনায় উত্কর্ষের রেন্কিং-এ প্রকাশ যে ভারত সংঘরাষ্ট্রে শ্রেষ্ঠ ১০টির মধ্যে রয়েছে যাদবপুর।  কলকাতাও রয়েছে ২০র মধ্যে। নতুন দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার টাকা-পয়সা-অনুদানের ক্ষেত্রে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে যে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করে, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এনেছে এই কৃতিত্ব। যদি টাকা পয়সা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছাত্র-সংখ্যার উপর ভিত্তি করে একেক ছাত্রের উপর মাথাপিছু খরচার হারে সমবন্টিত হত, তাহলে এই উপমহাদেশে আজকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্কর্ষ বেলুন ফুটো।  সাচ্চা উত্কর্ষ প্রকাশ পেতো।  নতুন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ অনুদানে মত হয়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই ভাবে তাদের এলিটিজম বেছে অন্যদের থেকে সংহতি দাবি করত না। জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ানোর মতই গুরুত্বপূর্ণ হত বর্ধমানের পাশে দাঁড়ানো। রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে একদিকে শিক্ষার বিশ্বে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখা হয়েছে, আরেকদিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা সংস্থায় চলছে হিন্দি  প্রকল্প, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের দানবীয় আস্ফালন। আমাদের রাজ্যপাল কি এই সকল বিষয়ে তার  আচার্য্যের ভূমিকা পালন করেছেন?
গত মাস ছিল ২১ ফেব্রুয়ারির মাস, মাতৃভাষার মাস, মাতৃভাষার জন্য লড়াই-এর মাস। এখুনো ঝাড়খন্ডে ও বিহারে বাংলা-ভাষীরা বিক্ষিপ্ত ভাবে তাদের ভাষা অধিকারের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন অজস্র প্রতিকুলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে। এ সংগ্রাম দৈনিক কারণ আমাদের আত্মপরিচিতি দৈনিক পাল্টায় না। অথচ এই ফেব্রুয়ারিতেই খোদ যাদবপুরে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের ঝটিকা বাহিনী সম্প্রতি যে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালালো, তার নেপথ্যে রয়েছে অন্য একটি অশনি সংকেত। সেদিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ সভা বা জেনেরাল বডি মিটিং-এ হেই একই গোষ্ঠী "হিন্দি মে বোল " ইত্যাদি বলে বাংলা বন্ধ করে ছাত্র প্রতিনিধিদের হিন্দিতে কথা বলতে বাধ্য করে। এ লজ্জা আমরা রাখবো কোথায়?  আমরা কি হিন্দি বলয়ে কখুনো এরকম কোন পরিস্থিতির কথা ভাবতে পারি? না , পারি না এবং সেটি কাম্য-ও না। কিনতু আমাদের বুঝতে হবে কেন এটা কলকাতায় বাংলাকে দমন করে হিন্দি চাপানো সম্ভব কিনতু  দিল্লিতে হিন্দিকে  পাশে সরিয়ে তামিল বা বাংলা চাপানো সম্ভব না।  আমাদের বুঝ নিতে হবে এই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বাণীতে ফাঁকিটা ঠিক কোথায়, কে রাজা আর কে প্রজা, কে প্রথম শ্রেণীর নাগরিক আর কে দ্বিতীয় শ্রেণীর, কে জন্মেই ভারতীয় আর কাকে সারাজীবন নিজের আত্মস্বত্তা বদলে ভারতীয় হবার প্রমাণ দিতে হয়। একুশে ফেব্রুয়ারী  সুযোগ করে দেয় ভাবতে - আমরা মানে কারা, কেন আমার রাষ্ট্র আমার করের টাকায় অন্যের ভাষা প্রচার করে কিনতু আমারটা করেনা। আমাদের ভেবে দেখতে হবে যে কে কারুর নিজের নিপীড়িত মাতা থাকতে বিমাতাকে পূজা করতে যে  রাষ্ট্র শেখায়, সে রাষ্ট্র কার আর সে রাষ্ট্র কার নয়।  আমরা পশ্চিম বাংলার বাঙ্গালী - বাংলার দেশের (বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নয়) ভাঙ্গা পশ্চিম ভাগ। এই ভাষা আমাদেরও প্রাণের ভাষা, বেঁচে থাকার অবলম্বন, ভালবাসার মাধ্যম, পূর্বসুরীর স্মৃতি, উত্তরসুরীর উত্তরাধিকার, ব্রতের ভাষা- ধর্মের ভাষা-রাজনীতির ভাষা- ঘাম ঝড়ানো কর্মের ভাষা - প্রেমের ভাষা- ফোপানোর ভাষা - খোঁটার ভাষা - অপরাধের ভাষা- দাঙ্গার ভাষা-যৌনতার ভাষা -না বলা কথার ভাষা - ভুলে যাওয়া দিনের ভাষা - আগামীকালের ভাষা- মুক্তির ভাষা।  আমরা বাঙ্গালী।

Version 2:
নতুনদিল্লি যাকে পশ্চিমবঙ্গকে "পালন" করতে পাঠায়, তিনি কেন রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে, এটা এক রহস্য। বিশ্বের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আসলেই নিজগুণে উত্কর্ষ-কেন্দ্র, নিজেকেই উত্কর্ষ-কেন্দ্র বলে ফলক লাগানোর মতো নির্লজ্জ লোক-হাসানো উত্কর্ষ-কেন্দ্র না , সেখানে কখুনই কোন সরকারী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পদে রাখা হয়না।বার্কলিতে স্থিত জগৎবিখ্যাত ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চলে মূলতঃ সরকারী অনুদানে। তার প্রধান এক স্বনাম-ধন্য অধ্যাপক এবং গবেষক। পদ পেতে তাঁকে কোন মন্ত্রীর পিএইচডি গাইড হতে হয়নি। কিনতু টাকা যে সরকার দেয়? সে তো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও সরকারই টাকা দেয়। কারণ এটা সরকারী দায়িত্ব। ঠিক যেমন মানুষ খেতে পারছে কিনা, সেটা দেখা সরকারী দায়িত্ব। চালে ভর্তুকি দেওবার অজুহাতে সরকার ঠিক করতে পারে না যে কখন, কিভাবে ভাত মানুষ রাধবেন, খাবেন। সরকারী ডাক্তারের মাইনে দেওয়ার কারনে রাষ্ট্র ঠিক করতে পারে না রুগীর চিকিত্সা ও রোগনির্ণয় কি ভাবে হবে, কোন রোগ নির্ণয় হবে, কোন রোগ নির্ণয় হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারী হস্তক্ষেপ একই রকম অনধিকার প্রবেশ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি ঘটেছে, এই বাংলার রাজ্যপাল, উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত কেশরিনাথ ত্রিপাঠি তা নিয়ে কৈফিয়ত চাইতে উপাচার্য্য স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ সুরঞ্জন দাসকে ডেকে পাঠান। বাংলা ও বাঙ্গালীর মান রেখে অধ্যাপক দাস বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতার "অপরাধে" অপরাধী ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুধ্যে পুলিশে নালিশ করেননি। বর্ধমানে ও কলকাতায় অন্যত্র স্তাবকতার যুগে যাদবপুরের শিরদাঁড়ার অস্বিত্ব জানান দেবার কারণে উপাচার্যের সাধুবাদ প্রাপ্য। এই শিরদাঁড়ার কিয়দংশ যদি তাঁর আগে এই তৃণমূল আমলের সেই উপাচার্যের থাকত যিনি পুলিশ আনিয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের পেটানোর ও যৌন লাঞ্চনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তাহলে সমাজের কল্যাণ হত। এই শিরদাঁড়া একটু ধার পেলে বামফ্রন্ট আমলে এই যাদবপুরেরই আর এক উপাচার্য্য ২০০৫-এ অনশনরত প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের পুলিশ দিয়ে পেটানোকে রুখতেন। এগুলোর একটাও আমরা ভুলিনি। যখন দেখি যে পুলিশ দিয়ে ছাত্র পেটানোর রাজনৈতিক কুশিলবরা দিল্লিতে গিয়ে সংহতি জানাচ্ছেন, আমাদের হাসি পায়। ভয়ও লাগে।
কেশরিনাথ ত্রিপাঠি সম্প্রতি বলেছেন যে যাদবপুরের ব্যাপারটি শেষ। এইবার লেখাপড়া হোক। দিল্লি-প্রেরিত আচার্য্যের নির্দেশের অপেক্ষায় কখুনো বসে থাকেনি নিখিল বাংলাদেশের গর্ব যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এই বছরই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রক প্রকাশিত গবেষনায় উত্কর্ষের রেন্কিং-এ ভারত সংঘরাষ্ট্রে শ্রেষ্ঠ ১০টির মধ্যে রয়েছে যাদবপুর। কলকাতাও রয়েছে ২০র মধ্যে। নতুনদিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার টাকা-পয়সা-অনুদানের ক্ষেত্রে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে যে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ সত্ত্বেও শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে যাদবপুর দেখিয়েছে উত্কর্ষ। যদি কেন্দ্রের অনুদান রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছাত্র-সংখ্যার ভিত্তিতে একেক ছাত্রের উপর মাথাপিছু খরচার একই হার ধরে বন্টিত হত, তাহলে উপমহাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উতকর্ষের বেলুন ফুটো হত। সাচ্চা উত্কর্ষ প্রকাশ পেতো। নতুনদিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ অনুদানে মোটা হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের এলিটিজম বেচে অন্যদের থেকে সংহতি দাবি করত না। জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ানোর মতই গুরুত্বপূর্ণ হত বর্ধমানের পাশে দাঁড়ানো। রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে একদিকে শিক্ষার বিশ্বে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখা হয়েছে, আরেকদিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা সংস্থার উপর চলছে হিন্দি চাপানোর প্রকল্প, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের দানবীয় আস্ফালন। এই বিষয়ে আচার্য্য রাজ্যপালের কি মত?
গত মাস ছিল ২১ ফেব্রুয়ারির মাস, মাতৃভাষার জন্য লড়াই-এর মাস। এ লড়াই দৈনিক কারণ আমাদের আত্মপরিচিতি দৈনিক পাল্টায় না। অথচ এই ফেব্রুয়ারিতেই খোদ যাদবপুরে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের ঝটিকা বাহিনী সম্প্রতি যে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালালো, তার নেপথ্যে রয়েছে ভয়ংকর সংকেত। সেদিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ সভা বা জেনেরাল বডি মিটিং-এ এই একই গোষ্ঠী উন্মত্তভাবে "হিন্দি মে বোল " আস্ফালনে ছাত্র প্রতিনিধিদের বাংলা বন্ধ করে হিন্দিতে কথা বলতে বাধ্য করে এই যাদবপুরে, এই বাংলায়। এ লজ্জা আমরা রাখবো কোথায়? আমরা কখুনো হিন্দি বলয়ে এরকম কোন পরিস্থিতির কথা ভাবতে পারি? পারি না এবং সেটি কাম্য-ও না। কিনতু আমাদের বুঝতে হবে কেন এটা কলকাতায় বাংলাকে দমন করে হিন্দি চাপানো সম্ভব কিনতু হিন্দুস্তানের দিল্লিতে হিন্দিকে পাশে সরিয়ে তামিল বা বাংলা চাপানো সম্ভব না। আমাদের বুঝে নিতে হবে "বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য" বাণীতে ফাঁকিটা ঠিক কোথায়, কে রাজা আর কে প্রজা, কে প্রথম শ্রেণীর নাগরিক আর কে দ্বিতীয় শ্রেণীর, কেন শিয়ালদহ থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর যাবার লোকাল ট্রেনের টিকিটে স্টেশনের নাম হিন্দিতে থাকে কিনতু বাংলায় থাকে না, কাদের স্বার্থে কাদের দালালি করতে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা তকমা দিয়ে মিথ্যা প্রচার করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারী সুযোগ করে দেয় ভাবতে - আমরা মানে কারা, কেন আমার রাষ্ট্র আমার করের টাকায় অন্যের ভাষা প্রচার করে কিনতু আমারটা করেনা। আমাদের ভেবে দেখতে হবে যে আমাদের নিজের নিপীড়িত মাতা থাকতে বিমাতাকে পূজা করতেশেখায় যে রাষ্ট্র, সে রাষ্ট্র কার আর সে রাষ্ট্র কার নয়। আমরা পশ্চিম বাংলার বাঙ্গালী - বাংলার দেশের (বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নয়) ভাঙ্গা পশ্চিম ভাগ। এই ভাষা আমাদেরও প্রাণের ভাষা, বেঁচে থাকার অবলম্বন, ভালবাসার মাধ্যম, পূর্বসুরীর স্মৃতি, উত্তরসুরীর উত্তরাধিকার, ব্রতের ভাষা- ধর্মের ভাষা-রাজনীতির ভাষা- ঘাম ঝড়ানো কর্মের ভাষা - প্রেমের ভাষা- ফোপানোর ভাষা - খোঁটার ভাষা - অপরাধের ভাষা- দাঙ্গার ভাষা-যৌনতার ভাষা -না বলা কথার ভাষা - ভুলে যাওয়া দিনের ভাষা - আগামীকালের ভাষা- শপথের ভাষা -মুক্তির ভাষা। আমরা বাঙ্গালী।
hajarduar | March 2, 2016 at 3:05 pm | Categories: Uncategorized

No comments:

Post a Comment