Monday 21 March 2016

তর্ক : তৃণমূল সিপিএম এবং ভণ্ডামী

Standard
শস, ফেচ্যা, ১৪/৩/২০১৬
আমাকে শুধু তৃণমুলিস্ট বলিস না, আমি বিজেপির ও ফর-এ। জয়ললিতারও ফর-এ। কারণ এদের ভণ্ডামি কম। বাকিদের বেশি। সিপিএম-কংগ্রেস ইত্যাদির মতো এরা ভেইল্ড দক্ষিণ নয়, স্পষ্ট দক্ষিণ।
মর
তৃণমূল ও বিজেপি কে তোমার ভন্ডামিহীন মনে হয় দেখে ভালো লাগছে। ওরা কিন্তু বাম্পন্থার হাব-ভাব নেওয়ার চেষ্টা করে। আর সিপিএম এরা প্রয়োজনে দক্ষিণপন্থী অবস্থান নেয়। ২০০৯, ২০১১ এর আগে যখন আমি সিপিএমের সমালোচনা করতাম, তখন তোমার সহানুভুতি পেত সিপিএম এবং কংগ্রেস। ২০১৪ র পার্লামেন্টারি ইলেকশানেও তুমি কংগ্রেসের ” সবাইকে নিজের মত স্বাধীন ভাবে চলার” নীতি নিয়ে প্রসংসা করতে শুনি। রাজনৈতিক ভাবনা অবশ্যই পরিবর্তনশীল। পুরনো অবস্থানকে বজায় রাখতে হবে সেটা বাধ্যতামূলক নই। কিন্তু সেটা ক্ষমতাকেন্দ্রিক একটা অবস্থান নিলে হিসেবে একটু এদিক ওদিক হয়ে যায় এই আরকি। টাকার জন্যে দুর্নীতি ও ক্ষমতার জন্য দুর্নীতি তোমার কাছে আগে একই ছিল। চকোলেট খেয়ে অনসনকে তুমি অসততা বলেছিলে। এখন কিন্তু মমতা চুড়ান্ত সৎ তোমার কাছে। আসলে সততার সংজ্ঞাতেও এমেন্ডমেন্ট আনা যায়।
শস
সৎ বলিনি, বলেছি তুলনায় কম ভণ্ড। আমার কথাকে সুবিধেমতো পাঞ্চিং ব্যাগের শেপ বানাস না। ওইসব দলাদলির খেলায় তুই আমাকে ভেড়াতে পারবি না, দলকে কাঠামোগত ভাবেই আমি অপ্রাসঙ্গিক মনে করি। খেয়াল কর, অপ্রাসঙ্গিক বলেছি, খারাপ বলিনি। সূক্ষতাগুলো নজর করলে খারাপ হবে না, ওগুলো বাদ দিলে যেটা পরে থাকে, সেটা কমন সেন্স।
ক্ষমতা আর বর্তমানে ক্ষমতাবান – এই দুটো জিনিস এক না। আমি চিরকালই ক্ষমতার ম্যানেজারের, অর্থাৎ ‘ক্ষমতাবান’ এর তুলনায়, যে ‘ক্ষমতাবান’ হতে চাইছে, তার ব্যাপারে বেশি ক্রিটিক্যাল। কেন, তার জন্য কথা বলা যেতে পারে। আমার যে লেখাটা তোকে পাঠিয়েছিলাম, তার মধ্যে এর ইঙ্গিত আছে।
ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা ক্ষমতাবান হতে চাওয়ার মধ্যে বেশি থাকে। যে ক্ষমতাবান, তার সেটা ধরে রাখতে চাওয়ার তুলনায়।
যা ম্যানিফেস্টেড, তা অল্রেডি এক্সহস্টেড। রবীন্দ্রনাথেও আছে, তোমার আঘাত সাথে নেমে এলে তুমি, যেথা মোর আপনার ভূমি।
মর
তার মানে সমস্ত গণ আন্দোলন অসমর্থনযোগ্য, কারন প্রাই সবক্ষেত্রেই বর্তমান ক্ষমতাবানেদের চ্যালেঞ্জ করা হয় আর প্রায় সব ক্ষেত্রেই ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা থাকে। মানুষের হাতে ক্ষমতার সম-বিভাজন তাই পরিহারযোগ্য। শাসক শ্রেনী সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য সবসময়। নাজি থেকে জারতন্ত্র, ঔপনিবেশিক শাসন থেকে রাজতন্ত্র সবই সমর্থন পাওয়ার দাবী রাখে। দলাদলীর রাজনীতিতে তোমাকে আনতেও চাই না। মমতা সম্পর্কে তুমি ‘অপেক্ষাকৃত’ কম ভন্ড কথাটা প্রয়োগ করনি (যদিও সেটাও কতটা সঠিক তা আলোচনা সাপেক্ষ)। তুমি মমতাকে একদম অনেস্ট ঘোষনা কর। সেটা দলীয় রাজনীতির সংস্রব এড়িয়ে যাওয়া নয়। সমর্থন ই করে। যাই হোক, তোমাকে পাঞ্চিং ব্যাগ করার কোন বিদঘুটে ইচ্ছে আমার নেই। যদি সেটা করা হয় তাহলে সেটা মুর্খামি। কিছুটা শ্রীজাত বা অনুপমকে আক্রমন করার মতই।
শস
১/ জন আন্দোলন মানুষের বাসনা থেকে হয়। বা ছোটো ছোটো বাসনা মিলে তৈরি হওয়া বাসনাতন্ত্রে দুর্যোগ ঘণীভূত হলে হয়। তাতে স্বভাবগত ভাবেই ক্ষমতা হস্তক্ষেপ করলে তা ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের জায়গায় যায়। সেখানেও পাশ কাটানোর স্কোপ থাকে। ২/ ক্ষমতাবানকে চ্যালেঞ্জ জানানো আর পালটা ক্ষমতাবান তৈরি করার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। উদাহরণ, কলরব আন্দোলন। তা পাল্টা ক্ষমতাবান বানানোর রাস্তায় হাঁটেনি। ৩/ আমি টিএমসিকে কম ভণ্ড বলেছি। যদি কখনো ভণ্ডামিহীন বলে থাকি, সেটা ঐ বিশেষ ইস্যুতে, সামগ্রিকভাবে নয়। এরকম বিশেষ ক্ষেত্রে সিপিএম ও আজকাল ভণ্ডামিহীন পজিশন নিচ্ছে। স্বাস্থ্যের লক্ষণ। যেমন, মোর্চা প্রার্থীদের একতরফা সাপোর্ট। সেটা আমি সমর্থন করছি কি না সেটা অন্য ব্যাপার, ওরা ভণ্ডামি করছে কি না সেটা বিষয়। আশা করি তুই পরে বলবি না – তুমি তো সিপিএমের মোর্চাকে সাপোর্ট সমর্থন করেছিলে। ৪/ তোর প্রজার ডিস্কোর্স টাতেই গণ্ডগোল আছে, কারণ, প্রজা আইডেন্টিটিটাই রাজা সাপেক্ষ। কোনো স্বাধীন আইডেন্টিটি নয়। ৫/ তুই যে তল থেকে রাজনৈতিক ব্যাপারগুলোকে দেখছিস, সেটা একেবারেই উপরিতল। মিডিয়া বাইট, স্লোগান, বক্তৃতা, এমনকি দলিল পরচা – এসব উপরিতল, রাজনীতিটা নির্মাণ হয় অনেক গভীরে, সমাজের মধ্যে, মানুষের দৈনন্দিনতায়।

No comments:

Post a Comment