Tuesday 12 July 2016

সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ ------- মুনতাসির মামুন

সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ ও একরৈখিক চিন্তাভাবনা
প্রকাশ: ১২:৪০ pm ২২-০৬-২০১৬ হালনাগাদ: ১২:৪০ pm ২২-০৬-২০১৬
 
 
 
  
  Print
 
 
 


(গতকালের পর)
মুনতাসীর মামুন॥
॥ পাঁচ ॥
বাঙালী হিসেবেই আমরা দেশটি স্বাধীন করেছিলাম। হিন্দু বা মুসলমান হিসেবে নয়। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত হিন্দু-মুসলমান প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয়নি। সেই প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছিল বা সৃষ্টি করা হয়েছিল জিয়াউর রহমানের আমল থেকে। স্টান্টবাজ এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে সেই পার্থক্যটি বড় করতে চেয়েছিলেন। আমাদের মনে রাখা দরকার, সেই সময় এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যারা মামলা করেছিলেন তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান দু’সম্প্রদায়েরই বুদ্ধিজীবী ছিলেন।
খালেদা জিয়া ও নিজামী-খালেদা জিয়ার আমলে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে হিন্দুদের টার্গেট করা হয়। খালেদা-নিজামী বা অন্য কথায় বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানীদের এই দুটি দল রাজনীতিতে পাকিস্তান আমলের মতো ধর্মকে টেনে এনেছিল। তাদের বিভিন্ন হামলার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলেছেন এবং হিন্দু নেতৃবর্গও যে, হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, সুতরাং, তাদের তাড়াতে পারলে বা ভোট দেয়া থেকে নিবৃত্ত করতে পারলে আওয়ামী লীগের ভোট কমে যাবে। দুই, জমিজমা দখল করা যাবে। তিন, হিন্দু-মুসলমান ফারাক সৃষ্টি করা যাবে। অনেকেই এ কথা বিশ্বাস করতেন। কিন্তু, বাস্তবে এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। এ চিন্তা একরৈখিক।
প্রচুর হিন্দু এখন আওয়ামী লীগে ভোট দেন না। বিএনপিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে আছেন। গয়েশ্বর রায় বা নিতাই রায়রা তো আওয়ামীবিরোধী নেতৃত্বে আছেন। নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের জমিজমা কী এমন বেশি আছে? জমিজমা কি শুধু হিন্দুদেরই দখল হচ্ছে? মুসলমানদের কী পরিমাণ জমি দখল হচ্ছে? জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সীমিত জমির কারণে, জমি এখন মহার্ঘ বস্তু। কক্সবাজারে আমি, জাফর ইকবাল, গাজী সালাহউদ্দিন প্রমুখ অনেকে মিলে ছোট এক টুকরো জমি কিনেছিলাম শখ করে। বিএনপি-আওয়ামী দুই আমলেই তা বারবার দখল হয়েছে। এখনও হামলা হচ্ছে। নির্বাচনের সময়, হিন্দু কেন, আওয়ামী লীগ সমর্থক মুসলমানরাও বিতাড়িত হয়েছেন। খালেদার আমলে সেনাবাহিনী ও মার্কিন দূতাবাসের সহায়তায় [বিএনপি নেতা মিলন মার্কিন দূতাবাসের এক মহিলাকর্মীকে নিয়ে এসেছিলেন ভোটের দিন] বিএনপি জেতে। আমাদের গ্রাম থেকে আমাদের চলে আসতে হয়। প্রায় পাঁচ বছর আমাদের এলাকার অনেক আওয়ামী লীগার [হিন্দু নয়] এলাকায় ফিরতে পারেননি। আমরাও নয়। সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচনে সারাদেশে প্রায় ১৫০ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে হিন্দু কয়জন? সবই মুসলমান এবং অধিকাংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক। সুতরাং, প্রচলিত সব ধারণা সত্য নয়।
মূল রাজনীতিটা আমাদের অনুধাবন করা দরকার। স্বদেশ রায় এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। আগ্রহী পাঠক তার প্রবন্ধটি পড়লে সব তথ্য পাবেন। আমি সংক্ষিপ্তভাবে বলি-
মূল বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি বনাম পাকিস্তানের রাজনীতি। বাংলাদেশের রাজনীতির ধারক ১৪ দল ছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র বামপন্থী দল যেমন, বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি প্রভৃতি। এর বিপরীতে আছে পাকিস্তানের রাজনীতির ধারক-বাহক। এরা হলো জামায়াত-বিএনপি ও তাদের সমর্থক ধর্ম ব্যবসায়ীদের ছোটখাটো দল। এই রাজনীতি পাকিস্তান আমলেও ছিল। বঙ্গবন্ধু এর বিনাশ ঘটিয়েছেন যার প্রমাণ ১৯৭০ সালের নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭২-এর সংবিধান। জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের রাজনীতির কারণে দরকার ছিল ঐ ঐক্য বিনষ্ট করা। পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এনে জাতিকে তিনি দ্বিখ-িত করেন। সেই থেকে লড়াইটা শুরু যা এখনও চলছে। মনে রাখা দরকার ঐ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জিয়াকে সমর্থন করেছিলেন, পরবর্তীকালে এরশাদ-খালেদাকেও।
শেখ হাসিনা যেদিন থেকে ক্ষমতায় এসেছেন সেদিন থেকে তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে তাকে উৎখাতে অগ্রসর হয়েছে। ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, তাকে বিএনপি-জামায়াতের আটকে পড়া পাকিস্তানীরা ২০ বার হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মহিলা। কিন্তু, আমরা মার খেয়েও দেশত্যাগ করিনি। অনেকে করেছেন, এখানে থেকেই লড়াই করে করে নিজেদের জমি উদ্ধার করেছি। কারণ, আমরা মনে করেছি দেশটা আমাদের, বাঙালীদেরই। আটকে পড়া পাকিস্তানীদের দল বিএনপি-জামায়াতের নয়।
প্রচ- ভায়োলেন্সের মাধ্যমে তারা যুদ্ধাপরাধ বিচার নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, নির্বাচনও। অনেক হিন্দু নেতা বলেছেন, ১৯৭১ সালের মতো এখনও হিন্দু টার্গেট করা হচ্ছে, গণহত্যা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত আপত্তিজনক কথা। প্রাক ২০১৪ এবং ২০১৪ পরবর্তী সময়ে ভায়োলেন্সে কতজন হিন্দু মারা গেছেন? যদি শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ই টার্গেট হতেন তাহলে এতো মুসলমান, নিরাপত্তা বাহিনীর এতো মুসলমান কেন মারা গেলেন? বাড়িঘর তাদের কতগুলো পুড়েছে? হ্যা, হিন্দুদের পুড়েছে। অন্যদেরও পুড়েছে। ১৯৭১-এর মতো এসব পাকিস্তানীরা টার্গেট করেছিল আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থক ও হিন্দুদের।
২০১২ থেকে এ পর্যন্ত মন্দির আক্রান্ত হয়েছে, হিন্দু এলাকায় আক্রমণ হয়েছে এ সবই সত্য। কিন্তু, আমরা যদি শুধু একরৈখিকভাবে তা দেখি তবে তা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। এদের পাশে সব সময় দাঁড়িয়েছেন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন, ১৪ দল, নাগরিক সমাজ। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান পরিষদ বিবৃতি ছাড়া আর কতটুকু সাহায্য করেছেন? প্রতিটি ঘটনার পর আর কেউ না থাক নির্মূল কমিটির নেতৃবর্গ গিয়েছেন। এবং এটা সত্য সংখ্যাগরিষ্ঠরা যেখানে মার খেয়েছেন সেখানে তারা তেমন যাননি।
কারণ, তারা মনে করেছেন আগে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু, তা সত্ত্বেও এটাতো মিথ্যা হয়ে যায় না, সংখ্যাগরিষ্ঠের মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজনও নির্যাতিত হয়েছে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ গঠনে আপত্তির কিছু নেই। আপত্তিটা হলো তারা মনে করিয়ে দিলেন, আবারও বিষয়টা বাঙালী বনাম পাকিস্তানের নয় এটি ইসলাম বনাম অন্য ধর্মের। এখন আলাদা নির্বাচন, কমিশন ইত্যাদি গঠনের দাবিও জানানো হচ্ছে। মনে হচ্ছে আবার পাকিস্তানী আমলেই ফিরে যাচ্ছি। এতে তারা লাভবান হয়েছেন বলে আমার মনে হয় না, বরং তারা নিজ সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করেছেন। তারা যদি বাঙালিত্বের ওপর জোর দিতেন ধর্মের ওপর নয় তাহলে এ প্রশ্নগুলো জাগত না। হাটহাজারীর এক সময়ের মুজাহিদ এখন হেফাজতি নেতা জনাব আহমদ শফি প্রথমদিন বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাকে-শাহরিয়ারকে শুধু নয় অজয় রায়কেও মুরতাদ ঘোষণা করেছিলেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী কাউকে তো মুরতাদ ঘোষণা করা যায় না। তারপরও তারা করেছেন। সুতরাং বোঝা যায় তারা কী পরিমাণ ক্রুদ্ধ মুক্তবুদ্ধির রাজনীতির প্রতি। এবং সেখানে তারা হিন্দু-মুসলমান থেকে মৌলবাদ বিরোধীদেরই টার্গেট করেছেন।

॥ ছয় ॥
শেখ হাসিনাকে এখনও উৎখাত করা যায়নি। মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে শুধু তাই নয়, তাদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হচ্ছে। জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির প্রবক্তাদের বিচার চলছে। জঙ্গীদের ধরা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক কমেছে। জামায়াতী শীর্ষ নেতারা সাজা পাচ্ছেন। শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে তারা এখন গুপ্তহত্যার আশ্রয় নিয়েছে।
গুপ্তহত্যার জন্য তারা কি শুধু হিন্দু বা খ্রীস্টানকে বেছে নিচ্ছে তাতো নয়। তারা মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষজনকে, ভিন্ন মতাবলম্বীদেরও বেছে নিচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষকরাও আছেন। দুজন বিদেশীও ছিলেন। এমন কী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের টার্গেট। এ কারণে, শুধু সংখ্যালঘুরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তা বলা একরৈখিক চিন্তাই হবে। তারা বলছেন, রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এ কারণে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শেখ হাসিনাকে দোষারোপ করছেন। এ যুক্তিতো অস্বীকার করি না। ধর্ম অনুসারেও সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। কেননা তারা আমানত। রসুল (দ.) নিজে তা মেনেছেন। রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার কথা বিদেশী রাষ্ট্রদূতরাও বলেছেন। আমাদের বিদেশ পছন্দ সাংবাদিকরাও ফলাও করে তা প্রচার করেছেন। এখন ফ্লোরিডায় ৪৯ জন হত্যা ও ইংল্যান্ডে এমপি হত্যার পর তারা নিশ্চুপ।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বা বর্ণবিদ্বেষ, ধর্ম বিদ্বেষের কারণে পৃথিবীজুড়েই সন্ত্রাসী কর্মকা- চলছে। এখন ঐ কূটনীতিকরা তার কথা বলছেন। আগে কিন্তু বলেননি। আমাদের বুম বহনকারী সাংবাদিকরা আর এখন জিজ্ঞেস করছেন না। তাহলে আইএস এসবের সঙ্গে যুক্ত নয়? বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা হলেই তা হয়, ভিন্ন মতাবলম্বীদের রাজনৈতিক স্পেস না দেয়ার জন্য, গণতান্ত্রিক নির্বাচন না হওয়ার জন্য, আইএস থাকার জন্য। অন্যদেশে হলে হয় তা সন্ত্রাসী কর্মকা-। আমাদের প্রিয় সাংবাদিকদের সে সব বলে লাভ নেই, তারা শুধু বুম বহন করতে শিখেছেন, প্রশ্ন করতে বা চিন্তা করতে নয়।
সরকার সন্ত্রাসী বা জঙ্গী ধরছে কিনা সেটা জিজ্ঞাস্য। হ্যাঁ, ধরছে। এরি মাঝে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যদি কেউ খুন হয় [সংখ্যালঘু হলে বেশি হৈ চৈ, মুক্তবুদ্ধির হলে তেমন নয়] এবং সেটি যদি সরকারী ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাহলে কোন সরকারই ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা শুধু নয়, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতও যে ভূমিকা পালন করছেন তাও খুব যথার্থ বলে অনেকে মনে করেন না। হিন্দু পুরোহিত হত্যা হলে তিনি সমবেদনা জানাতে যাচ্ছেন। অন্যরা হলে তা নয় কেন? শাহরিয়ার কবিরই এ প্রশ্ন তুলেছেন। ভিন্ন জীবন ধারার সমর্থককে হত্যা করা হচ্ছে। যেমন জুলহাস। মিতুর যে ছবি ছাপা হয়েছে তাতে বোঝা যায় খুব ধর্মপরায়ণ ছিলেন তিনি। তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে যাননি। জুলহাসের বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। এসব কিছুর মধ্যে মতলববাজি আছে। এসব কিছুই সমাজে রাষ্ট্রে বিভিন্নতা ছড়াচ্ছে, সন্দেহ ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে।
এখন প্রতিদিন খালেদা জিয়া সংখ্যালঘু হত্যার কথা বলছেন। হিন্দু নেতারাও বলছেন। অন্যদের হত্যার কথা বলছেন না। এমনকী রানা দাশগুপ্ত বিএনপি-জামায়াতের নাম নিতেও কুণ্ঠা বোধ করেছেন। তিনি বলছেন ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যালঘুদের প্রতি আন্তরিক ও যথেষ্ট সদিচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু এখন রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা দল যারা আগে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তারা বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালিয়েছে। তারা ২০১২ থেকে ২০১৪ সালে সংখ্যালঘুপ্রধান এলাকাগুলোয় একের পর হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। এরপর ২০১৪ সাল থেকে একের পর এক চলতে থাকা টার্গেট কিলিংয়ে আনুপাতিক হারে সংখ্যালঘুরাই বেশি হত্যার শিকার হয়েছেন।’ [বাংলাদেশ প্রতিদিন]
২০১৪ সাল থেকে টার্গেট কিলিংয়ে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা বেশি এটি সঠিক তথ্য নয়। ঐ সময় যত ভায়োলেন্স হয়েছে সেগুলোও টার্গেট কিলিং ছিল। তিনি স্বীকার করছেন নাম না উল্লেখ করে বিএনপি-জামায়াত সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ন করতে। তাহলে নালিশটা তার বিরুদ্ধে না হয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে হবে কেন?
বিএনপি-জামায়াতে তো হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে আছেন। গয়েশ্বর রায়, নিতাই রায়Ñ এরা অন্যতম। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কোন নেতা এইসব হিন্দু নেতাদের বিরুদ্ধে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি। রানা দাশগুপ্ত মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হিন্দু মন্দির ও জমি দখলের অপবাদ দিয়েছেন, আন্দোলন করেছেন, মেয়র নির্বাচনে তাকে হারাতেও সচেষ্ট থেকেছেন। কিন্তু, ঐ আমলে যারা হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানী রাজনীতি করছে সেই গয়েশ্বরদের বিরুদ্ধে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি।
আমাদের মিডিয়াও বিভিন্নতা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখছে। ‘আদিবাসী তরুণী ধর্ষিত’, ‘হিন্দু বালিকা ধর্ষিত’, ‘সংখ্যালঘুর জমি দখল’- এ ধরনের শিরোনাম দেখলে যে কারও ধারণা হবে বাংলাদেশে বেছে বেছে শুধু এ ধরনের কর্মকা- চালানো হয়। মুসলমান তরুণী কি ধর্ষিত হচ্ছেন না বা খুন হচ্ছেন না বা তাদের জমি দখল করা হচ্ছে না। কিন্তু সেভাবে শিরোনাম হয় না। এতে সমাজে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয়। যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে তাদের কাছে ধর্মবোধগুরুত্বহীন। তারা বিশেষ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই তা করছে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা মতাদর্শের সবাই তাদের টার্গেট। এটি ভুললে চলবে না।

No comments:

Post a Comment