Sunday 20 November 2016

রোহিঙ্গারা নিখিল বাঙালির অংশ ------------------------গোলাম কিব্রিয়া

         একটা জনগোষ্ঠী হরেদরে অপরাধপ্রবন হয়না। আনরুলি নেটিভ, লেজি নেটিভ এগুলো কলোনাইযারদের কয়েন করা টার্ম। গভর্নমেন্টালিটির স্বার্থে তারা এটা করতো। বঞ্চনা, রেইসিজম ইকোনমিক সেগ্রিগেশন থেকে দরিদ্র মানুষ ইনফর্মাল ইকোনমিতে জড়িয়ে পড়ে, ব্ল্যাক মার্কেটে অংশী হয়। ইউরোপীয়ান ঘেঁটোতে, নিউইয়র্কের হার্লেমে, আগারগাঁও বস্তিতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ বেশী হয়, কারন তারা ইকোনিমিক মেইনস্ট্রিমে আসতে পারেনা। পভার্টি ও ক্রাইম কো-রিলেটেড। রোহিঙ্গারা ততটুকুই অপরাধপ্রবন যতটুকু বাঙালীরা, তারা ততটুকুই শান্তিপ্রিয় যতটুকু বাঙালীরা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যদি কয়েক বছর প্রলম্বিত হত, তাহলে ত্রিপুরা, কলকাতার বাঙালী শরনার্থী ক্যাম্পগুলো থেকে মাদক বিক্রি হতো। এটাই স্বাভাবিক, ব্যাতিক্রম না।
মায়ানমারকে পশ্চিমারা বেশী প্রেশার দেবেনা কারন তারা মার্কেট খুলে দিয়েছে রিসেন্টলি। তাদের ন্যাচারাল রিসোর্সে এখন চীনের সাথে পশ্চিমারা ও ভাগ পাবে। সেমি-গণতান্ত্রিক মিলিটারি সরকার এথনিক ক্লিনজিংয়ে বিশ্বাসী। রোহিঙ্গাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, জাতিসংঘ ও তাদের নেবেনা। আমরা সীমান্ত খুলে দিতে পারি এবং তারপর পশ্চিমাদের সাথে দেন দরবারে যেতে পারি তাদের ভরনপোষনের ব্যাপারে। জাতিসংঘ নৈতিক সংকটে আছে, এই অস্বস্তি কাটাতে তারা একটা থোক বরাদ্দ দিতে রাজী হওয়ার কথা। এটা কঠিন কোন বিষয় না, কঠিনতর হচ্ছে ইন্টিগ্রেশন। ইন্টিগ্রেশন একটা পেইনফুল ও প্রলম্বিত প্রসেস। এর মাঝখানে তারা ইয়াবাসম্রাট ও পূর্ববাঙলার এসকোবার বদি ভাইয়ের মতন সরকারের স্নেহধন্য লুটেরাদের দ্বারা ব্যাবহৃত হবে, যেটা পিউরলি আইন শৃঙ্খলার প্রশ্ন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির কুফল। একটা মার্জিনাল, মানবেতর জীবন যাপন করা, পিঠ ঠেকে যাওয়া জনগোষ্ঠীকে এর জন্য দায়ী করা ভিক্টিম ব্লেইমিং। পশ্চিম যখন সিরিয়ান রিফিউজি নিতে অস্বীকার করে, তখন তারা এই যুক্তি দেয় এবং আমরা তার প্রতিবাদ করি।
রোহিঙ্গারা নিখিল বাঙালী জাতির অংশ। মগ দস্যুদের সময়ে, ব্রিটিশ রাজের সময়ে তাদের জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাস হিসেবে। বিখ্যাত বাঙালী কবি আলাওলকে ও কিশোর বয়সে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো দস্যুরা। পূর্ববাংলা ছাড়া ও বাঙালীরা পশ্চিম বাংলায় আছে, ত্রিপুরায় আছে, আসামে আছে, আরাকানে আছে, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন ডায়াসপোরায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রাস্ট্র ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু দেশ এক। যতটুকু দূরত্ব হলে গণহত্যায় নির্বিকার থাকা যায়, ততটুকু দূরত্ব আমাদের সাথে রোহিঙ্গাদের নেই। আমাদের আত্মীয় তারা।
রোমান আফ্রিকাতে টেরেন্স নামে একজন দাস ছিলেন, যিনি নিজেকে টেরেন্স দ্যা আফ্রিকান বলতেন। স্ব-উদ্যোগে তিনি গ্রীক শিখেছিলেন এবং গ্রীক ক্লাসিক্যাল টেক্সটগুলো ল্যাটিনে অনুবাদ করতেন। দাসেরা সেইসময় প্রকৃতার্থেই দাস ছিলেন, উপমার্থে না। পশুসম্পদের মতই মালিকদের সম্পত্তি ছিলেন তারা। মানুষের মতন দেখতে একটা সাব হিউম্যান জীব। এই পরিমান লাঞ্ছনার মাঝে থাকার পরে ও টেরেন্স বলেছিলেন, "নাথিং হিউম্যান ইজ এলিয়েন টু মি" । এই কথাটা খুব গুরুত্তপূর্ন। যে জাতির কালচারাল মেমোরিতে গণহত্যা ও শরনার্থী ক্যাম্পের দগদগে ক্ষত, তারা কিভাবে সীমান্তের ওপারের এমন হিউম্যান ক্যাটাস্ট্রোফিতে ও এতটা নির্বিকার থাকে? যশোর রোডের পথে পথে ছড়ানো লাশ ও শকুনদের তুমি ভুলে গেলে বাঙালী?

No comments:

Post a Comment