ফকির লালন শাহ ও মরমি শিল্পী আব্বাসউদ্দিনকে স্মরণ করেছে বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ। লালন সাঁইজির ২৪১তম জন্মবার্ষিকী ও আব্বাসউদ্দিনের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। দ্রুত দাদরা তালে লালনের ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ পাবি’ কাহারবা তালে আব্বাসউদ্দিনের ‘নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে’ এই দুটি গানের সমবেত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে স্মরণানুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। এরপর লালন ও আব্বাসউদ্দিনের গানের একক পরিবেশনায় অংশ নেন- সোমা সরকার, আবদুুল আজিজ, ফাইরুজ নাওয়ার কাঁকন, অনঙ্গ মোহন রাজবংশী, নাসরীন হায়াত, তাবাসসুম রিয়া, হরিমঙ্গল দাশ, নাসরিন ফেরদৌস চমন, সেলিনা আলম, সাবিনা ইয়াসমিন, রিয়াদ হাসান, মফিজুর রহমান বিরহী, লুৎফুন নাহার মনিরা ও ড. আবুল কালাম আজাদ। ‘যেখানে সাঁই বারামখানা, মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার, গুরু পদে নিষ্ঠা মন যার হবে, আমার ঘরখানায় কে, তিন পাগলে হলো মেলা, ও মন গুরু ভজলে সাঁইজির অমিয় বাণীর কথা ও সুরের এমন গানে মিলনায়তন হয়ে ওঠে লালনময়। মুহুর্মুহু করতালি ও আনন্দ-উল্লাসে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানায় মিলনায়তন পরিপূর্ণ লালনভক্তরা। পিনপতন নীরবতায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো সাঁইয়ের সুরে অবগাহন করে সাঁইজির প্রেমে হারিয়ে যান লালনভক্তরা। অন্যদিকে মরমি শিল্পী আব্বাসউদ্দিনের মরমি গানের পরিবেশনায় সুরের অনুরণন  তৈরি হয় লোকসংগীতপিয়াসীদের হৃদয়ের তন্ত্রীতে। লালনের পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে পরিবেশিত হয় মরমি শিল্পী আব্বাসউদ্দিনের ‘আমার হাড় কালা করলিরে, আমায় এত রাতে কেন ডাক দিলি, ওরে ও পরানের মাঝি, ঐ না রূপে নয়ন দিয়ে, থাকতে পার ঘাটাতে, ও যার আপন খবর, ফাঁন্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে, নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে ইত্যাদি গান। প্রতিটি পরিবেশনার পরই মিলনায়তন প্রকম্পিত করতালিতে শিল্পীদের আন্তরিকতা মিশ্রিত অভিনন্দন জানায় আব্বাসউদ্দিনের ভক্তানুরাগীরা। এর আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তৃতা করেন লালন স¤্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন ও নজরুল গবেষক সংগীত শিল্পী ড. নাশিদ কামাল। শিল্পকলায় মঞ্চস্থ কণ্ঠশীলনের ‘যা নেই ভারতে’ : শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হলে গতকাল সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘যা নেই ভারতে’। মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে বর্তমান সময়কে ধারণ করে কন্ঠশীলনের ভিন্নধর্মী নাটকটি মনোজ মিত্র রচিত। এই নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন মীর বরকত। মহাভারত আশ্রয় করে রচিত হলেও ‘যা নেই ভারতে’ নাটকে নাট্যকার গোটা ঘটনাপ্রবাহকে একটু অন্যরকমভাবে বর্ণনা করতে চেয়েছেন। কুরুবংশের রানি তথা হস্তিনাপুরীর রাজবাড়ির বধূদের কেউ স্বেচ্ছায় মাল্যদান করেনি। ভীষ্ম যুদ্ধ করে তার ভাই বিচিত্রবীর্যের হাতে তুলে দেন দুই নারী অম্বিকা ও অম্বালিকাকে। কারণ তিনি বিবাহ করবেন না। কিন্তু ভাই তরুণ বয়সে মারা যান। দেখা দেয় অস্তিত্বের সঙ্কট বংশরক্ষায়। ভীষ্ম অম্বিকাকে অনুরোধ করেন পুত্রসন্তান ধারণ করতে। অম্বিকার আকাক্সক্ষা তিনি ভীষ্মের সন্তানের মা হতে চান। ভীষ্মের বক্তব্য তিনি প্রতিজ্ঞাভ্রষ্ট হবেন না। নারীকে সেই পুরুষের ইচ্ছার কাছে নতজানু হতে হয়। পুরুষের আদেশে, তার বিছানায় যাকে পাঠানো হবে তাকেই গ্রহণ করতে হবে। ব্যাসদেবের সঙ্গে অম্বিকার বলপূর্বক মিলন হয়। সে মিলনে ব্যাসদেবের প্রতি না তাকানোয় জন্ম হয় অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের। অম্বালিকার সঙ্গে মিলনে জন্ম নেন পা-ু। দাসীর গর্ভে জন্মান বিদুর। ব্যাসদেব এদের সবার পিতা। গল্প এগিয়েছে এমনভাবেই মহাভারতের মূল কাহিনির শরীর ছুঁয়ে। নাটকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবদুর রাজ্জাক, একেএম শহীদুল্লাহ কায়সার, সোহেল রানা, সালাম খোকন, অনন্যা গোস্বামী, জেএম মারুফ সিদ্দিকী, নিবিড় রহমান, কামরুল হাসান, রাজিয়া সুলতানা মুক্তা, তনুশ্রী গোস্বামী, নাজনীন আক্তার শীলা, তাসাউফ-ই-বাকি বিল্লাহ রিবিন, সুমন কুমার দে, তৃপ্তি রানী ম-ল, ফারিয়া আক্তার সোমা, শামীম রিমু, মাহমুদুল হাসান, শাহানা রহমান, মেহেরুন্নেছা অনীক, শরীফ আবদুল ওয়াহাব, রুহুন ওয়াসাতা, অমিতাভ রায়, অনুপমা আলম, প্লাবন রব্বানী, আফরিন খান, মিজানুর রহমান চৌধুরী মিশন, রুবেল প্রমুখ।