Tuesday 13 October 2015

ভাষা অধিকার নিয়ে চেন্নাই ঘোষণা

ভারত সরকারের  হিন্দি আধিপত্যবাদের বিরুধ্যে সকল ভাষার সম অধিকারের দাবিতে নানা ভাষার প্রতিনিধি মিলিত হয়েছিলেন তামিল নাডুর চেন্নাইতে। সেখানে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তৈরী হয় ভাষা অধিকার নিয়ে চেন্নাই ঘোষণা। ভাষা অধিকার নিয়ে চেন্নাই ঘোষণার বাংলা তর্জমা করেছেন আমাদের Promote Linguistic Equality – West Bengal গোষ্ঠীর সদস্য রৌনক। সাথীদের অনুরোধ করব, চেন্নাই ঘোষণাটিকে  দিকে দিকে ছড়িয়ে দিন।  এটিকে পড়ুন, এটিকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনা চলুক।
**************************
ভাষার অধিকার বিষয়ে চেন্নাই ঘোষণা
ভাষার অধিকার বিষয়ক অধিবেশন
১৯-২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ (১-২য় ভাদ্র, ১৪২২)
চেন্নাই
২০-ই সেপ্টেম্বার, ২০১৫, চেন্নাই-এ সমবেত হয়ে, যে-যে সংগঠন ও যে-যে ব্যক্তি-জন বর্তমান ‘ভাষার অধিকার বিষয়ে চেন্নাই ঘোষণা’ বা চেন্নাই ঘোষণার সাক্ষরকারী,
৯-ই জুন, ১৯৯৬, স্পেন-এর বার্সেলোনা থেকে প্রকাশিত ‘ভাষার অধিকার বিষয়ে সর্বজনীন অধিকারের ঘোষণা’-কে বিবেচনা করে, যেটা ছিল নানাবিধ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঘোষণা, আইন-সমূহ, অঙ্গীকারপত্র এবং অধিবেশনের পরিণতি, যার মধ্যে পড়ে ১৯৪৮-এর ‘মানবাধিকার বিষয়ে সর্বজনীন ঘোষণা’, ১৯৬৬-এর ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারপত্র’, ১৯৯২-এর ইউনাইটেড নেশান্স অর্গানাইজ়েশান এর সাধারণ সম্মেলন-এর ৪৭/১৩৫ প্রতিজ্ঞাপত্র, ১৯৮৯-এর ইন্টার্ন্যাশানাল লেবার অর্গানাইজ়েশান-এর বৈঠক এবং অন্যান্য, কোনো বিশেষ ভাষার বিকাশ-কে রুদ্ধ করা বা জোর করে আরোপ করা বা অন্যান্য ভাষার তুলনায় এক বিশেষ ভাষা-কে প্রচার করা এবং ভাষার অধিকার নিয়ে ভারত গণরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একাধিক ভাষা-গোষ্ঠীর সংকল্প এবং দাবী-সমূহ বিবেচনা করে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান ভাষা-ভিত্তিক নীতি-গুলো মাথায় রেখে যা ভারত গণরাজ্যের বিবিধ সম্প্রদায়ের মুখের-ভাষার বিকাশ এবং কখনও-কখনও অস্তিত্ব-রক্ষার পরিপন্থী, ভারতের সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত বর্তমানে প্রচলিত নির্দেশিকা-সমূহ কে বিবেচনা করে, যেখান থেকে উৎপত্তি ঘটেছে ভারত গণরাজ্যের মধ্যে ব্যবহৃত সমস্ত ভাষার সঙ্গে সম্পর্ক-যুক্ত সব আইন, নিয়ম-কানুন ও মূলনীতি, যা মোটেও ভাষাগত সমতা এবং অধিকারের ওপর নির্ভরশীল নয়, যা মোটেও বিভিন্ন ভাষাগত সম্প্রদায়ের দাবী-কে মর্যাদা দেয় না, ভারত গণরাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল কে বিবেচনা করে, যা সর্ব-ভারতীয় স্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন ছাড়াও বৃহৎ বাণিজ্যিক গণমাধ্যম ও রাজ্য সরকার-দের দ্বারা সমর্থিত ও প্রচারিত, এবং সর্বোপরি সময়ে-সময়ে নানাবিধ ভাষাগত সম্প্রদায়ের এই বাধ্যতামূলক আরোপ-এর বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ গণ-অসন্তোষ ও গণবিক্ষোভ কে মনে রেখে, উন্নয়নের তকমা দিয়ে ইংরাজী-কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার অভ্যাস এবং জনজীবন ও ব্যক্তিগত যাপন থেকে ভারত গণরাজ্যের মধ্যে প্রচলিত সমস্ত ভাষা-কে ছেঁটে ফেলে প্রাত্যহিক জীবনে ইংরাজীর সর্বগ্রাসী দাপট যে আমাদের ভাষাগত-সংস্কৃতিগত-অর্থোপার্জন এর সম্ভাবনার পরিসর-কে সংকীর্ণ করে – এই ব্যাপার-টা বিবেচনা করে,
এই নিম্নোল্লিখিত তিন-টে দাবী মনে রেখেঃ
১। ভারতের সংবিধান এর পরিশিষ্টের আট নম্বর তথ্য সারণি-তে তালিকা-ভুক্ত
ভাষা-সমূহ কে প্রতিনিধিত্ব করা ব্যাপক জনমানব তাদের নিজ-নিজ ভাষা-কে ভারত গণরাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি ভাষা রূপে চালু করার দাবী,
২। সেই-সব অন্যান্য অনেক ভাষা-সমূহ কে প্রতিনিধিত্ব করা ব্যাপক জনমানব-এর এই উপরি-উক্ত পরিশিষ্টে নিজ-নিজ ভাষা-কে যুক্ত করার দাবী,
৩। বিবিধ ভূমিসন্তান-দের এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠী সহ শতাধিক ভাষাগত সম্প্রদায়ের প্রত্যেক অপ্রতুল জনসংখ্যা এবং তাদের সদস্য-দের নিজ-নিজ ভাষা-কে সংরক্ষিত করা এবং বিকশিত করার দাবী,
ভারত গণরাজ্যের মধ্যে ব্যবহৃত সমস্ত ভাষা ভারত গণরাজ্যের নাগরিক-দের বৈচিত্র্যের দিকে চিহ্নত করে যার জন্য এই ভাষা গুলো ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক কারণে প্রত্যেক বিশেষ-বিশেষ ভাষা সম্প্রদায়ের অঙ্গ – এই ব্যাপার-টা বিবেচনা করে,
এইটা মনে রেখে যে, ভারত গণরাজ্যের সমস্ত ভাষা ইতিবাচক পরম্পরাগত জ্ঞানের উৎকৃষ্ট সঞ্চয়-স্থান যেগুলো শত-শত বছর ধরে বিকশিত হয়েছে নিজ-নিজ আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও চর্চার ওপর দাঁড়িয়ে যাকে হারানোর মর্ম হল প্রত্যেক ভাষাগত সম্প্রদায়ের পূর্ব প্রজন্মের থেকে পাওয়া নিজস্ব ইতিবাচক উত্তরাধিকার, জ্ঞানভান্ডার এবং পর্মপরাগত বিশেষজ্ঞতা কে বিস্মৃতির অতলে হারানো,
আমরা এহেন ঘোষণা করছি যে
ভারত গণরাজ্যের মধ্যে সমস্ত ভাষা-কে সমান দৃষ্টি-তে বিবেচনা করতে হবে এবং প্রত্যেক ভাষাগত সম্প্রদায়ের নিজ-নিজ ভাষা-কে যে-কোনো সম্ভাব্য উপায়ে সংরক্ষিত করা, বিকশিত করা এবং জোরদার করে তোলার অধিকার আছে যেমন-টা কোনো গণতান্ত্রিক পরিমন্ডলে থাকা উচিত।
ভারত গণরাজ্যের প্রত্যেক নাগরিক-এর মৌলিক এবং অ-বিচ্ছেদ্য অধিকার হচ্ছে সরকারের আমলা, বিচার-ব্যবস্থায় কর্মরত সরকারী কর্মচারী এবং জন-প্রতিনিধি দের সাথে তাঁর নিজের মাতৃ-ভাষায় সংযোগ স্থাপন করতে পারা এবং সরকারের প্রতিনিধি-রাও যেন সেই উক্ত নাগরিক-এর সাথে তাঁর মাতৃ-ভাষার মাধ্যমেই আদান-প্রদান ও সংযোগ-স্থাপন করেন। ভারত গণরাজ্যের প্রত্যেক নাগরিক-এর তাঁর নিজের মাতৃ-ভাষায় প্রথাগত শিক্ষা-গ্রহণ এর অধিকার আছে। ভারত গণরাজ্যের প্রত্যেক নাগরিক-এর তাঁর নিজের মাতৃভাষায় বাণিজ্যিক ও জন-পরিষেবা পাওয়ার অধিকার আছে।
ভারত গণরাজ্যের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত ভাষাগত সম্প্রদায়ের একাধিক সুপারিশ ও দাবী-সমূহের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা ‘নতুন ভাষা কমিশন’ গড়ে তোলার আবেদন জানাচ্ছি যার কাজ হবে ভারতের সংবিধান এর ১৭ সংখ্যক অংশ এবৎ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নির্দেশিকা-সমূহ কে পুনরায় বিচার এবং সংশোধন করে একটা নতুন ভাষা-নীতির প্রণয়ন ও প্রয়োগ।
আমরা দাবী জানাচ্ছি যে ভারত রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার নিম্নোল্লিখিত দাবী-সমূহ কে তৎক্ষণাৎ স্বীকৃতি দিক এবং মান্যতা প্রদান করুক :
১। ভারতের সংবিধান এর পরিশিষ্টের আট নম্বর তথ্য সারণি-তে তালিকা-ভুক্ত
ভাষা-সমূহ কে প্রতিনিধিত্ব করা ব্যাপক জনমানব তাদের নিজ-নিজ ভাষা-কে ভারত গণরাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি ভাষা রূপে চালু করার দাবী,
২। সেই-সব অন্যান্য অনেক ভাষা-সমূহ কে প্রতিনিধিত্ব করা ব্যাপক জনমানব-এর এই উপরি-উক্ত পরিশিষ্টে নিজ-নিজ ভাষা-কে যুক্ত করার দাবী,
৩। বিবিধ ভূমিসন্তান-দের এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠী সহ শতাধিক ভাষাগত সম্প্রদায়ের প্রত্যেক অপ্রতুল জনসংখ্যা এবং তাদের সদস্য-দের নিজ-নিজ ভাষা যাতে বিলুপ্ত বা
বৃহৎ ধারার মধ্যে বিলীন না হয়ে যায়, তার জন্য একটা বিশেষ সরকারী দপ্তরের মাধ্যমে জরুরী সহায়তা করা।
আমরা এই দাবী জানাচ্ছি যে প্রত্যেক স্তরের সরকার যেন এইটা নিশ্চিত করে যে মাতৃ-ভাষায় প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণ এর অধিকার যেন কোনো ভাবেই লঙ্ঘিত না হয়।
আমরা দাবী জানাচ্ছি যে সমস্ত রাজ্য-সরকার যেন ইতিপূর্বে বহাল প্রশাসনিক ভাষা বিষয়ে আইন-সমূহ ও নীতি-সমূহ কে শত শতাংশ প্রয়োগ করে। যে-যে রাজ্যে এই ধরণের নীতি নেই, তারা যেন গুরুত্ব দিয়ে এই নীতি তৈরী করেন।
আমরা এই উপরি-উক্ত দাবী-সমূহ ঘোষণা করার মাধ্যমে মানবাধিকার সংগঠন, প্রথাগত শিক্ষা-ভিত্তিক ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সহ অন্যান্য নাগরিক সম্প্রদায়ের সংগঠন, সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠন, গণ-মাধ্যম, এদের কাছে আবেদন রাখছি যেন তারা সংসদে ‘ভাষাগত সমতা এবং অধিকার বিষয়ক প্রস্তাবনা’ আনার জন্য নিজ-নিজ ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা চালান এবং সেই প্রস্তাবনা গৃহীত হওয়ার পর আমরা যেন আমাদের অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছতে পারি।
এই খসড়ার নির্মাতা-রা হলেন :
আনান্দ্ গ., কার্ণাটাক (কান্নাড়)
উমাকান্থান প., কার্ণাটাক (কান্নাড়)
কোমাক্কামবেড়ু হিমাকিরাণ আঙ্গুলা, তামিল নাড়ু (তামিল,তেলুগু)
গর্গ চ্যাটার্জী, পশ্চিমবঙ্গ (বাঙলা)
গাণেশ চেতান, কার্ণাটাক (কান্নাড়)
যোগা সিং ভার্ক, পাঞ্জাব (পাঞ্জাবী)
থামিজ়নেরিয়াঁ, তামিল নাড়ু (তামিল)
দীপাক পাওয়ার, মহারাষ্ট্র (মারাঠী)
প. পাভিথ্রান, কেড়লা (মালায়ালাম)
প্রিয়াঙ্ক্ ক.স., কার্ণাটাক (কান্নাড়)
ভাসান্ত্ শেট্টি, কার্ণাটাক (কান্নাড়)
মাণি ভ. মাণিভান্নান, তামিল নাড়ু (তামিল)
রাভিশাঙ্কার আয়াক্কান্নু, তামিল নাড়ু (তামিল)
স. সেন্থিলনাথান (আঝ়ি সেন্থিলনাথান), তামিল নাড়ু (তামিল),
সাকেত শ্রীভূষাণ শাহু, ওড়িষা (কোশালি)

No comments:

Post a Comment