বৃষ্টিপথ
বৃষ্টিপথ উইলবাড়ি স্ট্রিটে এসেই দেখছি তুমি
ঘন ছায়ায় মোহর ভাাঙা মানুষ খুঁজছ ।
ঈষানে পা নৈঋতে মুখ সহ্য করেই
আতিশয্য বাদ দিয়ে ফের তোমায় আমি
নিয়ে এলাম হাসন রাজার আরাধ্য এই বৃষ্টিপথে
কাল পরিনাম যা হয় হবে আজকে গাঁথো স্নানের মালা।
দোলনচাঁপা ফুটবে বলেও কেন যেন
দেরি করছে । বিস্মিত এই জলদৃশ্যে
কেন না এই জোয়ার ভাটা তোমার আমার
চরিত্রময় জাল ছড়িয়ে জাল গুটিয়ে
এ সংসারে চলতে ফিরতে বাধ্য রাখছে ।
নিমন্ত্রণকে ডুবতে দেখি মাঝদরিয়ায়
উর্ধ্ব অধঃ বায়ু পবন কোন দিকে যে
যাব এখন …উইলবাড়ি স্ট্রিটে এসেই
খুঁজছি তোমার স্পর্শমাখা চুলের কাঁটা
গন্ধ পাচ্ছি অন্তরালে দোলনচাঁপা ফুটে ওঠার ।
প্রাণপতঙ্গ
ইচ্ছে ছিল নদীর ধারে বাড়ি করার । নোঙর খণ্ডে
ধৈর্যে গড়া প্রবেশপথের লতা ও ফুল আন্তর্জাতিক
শ্বেতপাথরের বারান্দাও উল্টো সোজা বাহান্ন তাস
দরজা ঝিনুক জানলা খুবই অসংলগ্ন শিল্পভঙ্গি
ইতিবাচক মুক্তি হচ্ছে ৬ ..৭ ঘন্টা রৌদ্রদগ্ধ ।
বেশ কয়েকটা ঠাণ্ডা লড়াই হেরে যাবার অভিজ্ঞতা
মাথায় নিয়ে বাড়ি বানাই অন্যরকম আমার আমি।
সবসময়ই তুমি থাকো দহন ভেজা রঞ্জিতাক্ষ
ঠাকুর ঘরে । ইচ্ছে ছিল তোমার ঠাকুরঘরও হবে
অনেকটা ঠিক তোমার মত ,স্তিমিত না উজ্জ্বলও নয় ।
কেবল একটু একাগ্র মন বসে থাকলে সবার মনেই
প্রাণপতঙ্গ সমর্পণের উপলব্ধি । উপবেশন
কক্ষে শুধু থাকবে আমার অবচেতন মমতারা
সবার কাছে অভিযুক্ত হয়েই আরও গান বানাব
মনে মনে।কে প্রার্থী কে শরণার্থী এসব সূক্ষ্ম
বিচার করার দায়িত্ব থাক পুরোপুরি তোমার ওপর ।
অনামিকা
শান্ত থাকার পরিস্থিতি উল্টে গেলে কি করা যায়
প্রায় গোলাকার নীল আলোকে ছুটতে দেখে ভাবছ তুমি
সংখ্যাশক্তি স্বীকার করে সীমাবদ্ধ প্রশ্নগুলির
সবকটি ঠিক জিজ্ঞাসা নয় ।অসহায়ের যুক্তি খোঁজার
প্রবণতা , ওলোটপালট যোগাযোগেও রাগ থামে না ।
আকাশ ভেঙে প্লাবন নামে ,ব্যবস্থাও লণ্ডভণ্ড
সন্ধেরাতে আকুল স্বরে কে যে চ্যাঁচায় …জাগতে রহ
জাগে অনুমানের প্রহর এবং সিদ্ধ অনামিকা ।
চতুষ্কোণের নীল আয়তন যুক্তিগ্রাহ্য সময় মাপে
তুমি নামাও তারের পাত্র ভাবাবেগের গভীরতা
নিরুদ্বেগে তোমার সঙ্গে প্রায় অসুস্থ হই আমিও ।
সময় মাপার দূরত্বকে বিদায় দিয়ে তুমি যাবে
আমিও যাব,হারাই ঘড়ি ,খেলার শিকল এবং হারাই
শান্ত থাকার দৃষ্টিশক্তি , তুমি আছ ,তুমি থাকবে
তুমি ছিলে। সব সমস্যা মেটানো কি মুখের কথা ?
অগ্নিবৃত্ত
বাধ্য হয়ে আটকে আছি তোমার তপ্ত ঘরের ভেতর
অন্ন চিন্তার অস্থিরতা অনন্যোপায় হোঁচট খাচ্ছে
ঘর কি আদৌ ঘর আছে আর ? পালঙ্কময় ওড়ার খবর
অনুবাদের অপরাধে প্রজাপতির রঙ জ্বলে যায় ।
উষ্ণ দেওয়াল অতসি করবী সাক্ষী , এই অবস্থায়
শীতল থাকা সম্ভবও না ,কেমন লাগছে ভাবতে পারো ?
নিষ্ঠুরতাই নিষ্ঠুরতার উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী
সামঞ্জস্য রক্ষাকল্পে অনেক কিছুই সহ্য করি
কিন্তু জানো …ধনুক ধরার ধরন দেখেই বোঝা যায় কে
কেমন দক্ষ ।যেমন আমি রথকে বলছি …অসমাপ্ত
এই কাঠামোই পরিমিত সম্ভাবনার পটভূমি ।
চাকা এবং জগতনাথও আসলে সেই রথের আগুন
দুর্বলতা গরম হচ্ছে অথচ এই অগ্নিবৃত্ত
কেবল অনুমানের বিষয় ,অন্যরকম আশ্রয়েও
তোমার আমার নিরাপত্তা বিসর্জনেই সফল হবে ।
সৃজনমায়া
ভিটে আগলে থাকার হেতু তুমি আমার শিরোভূষণ
তৃণশয্যা পৃথক ছায়ার আনুক্রমিক শ্যাম বলাকা ।
কাঠচাঁপা ও সজনে নিমের ছায়ায় আরো অজস্র গাছ
বিশেষভাবে হলুদ লাল ও শ্বেতকরবীর শেকড় ছোঁয়া
জলধারাই জানে শুধু পরিপুরক আলোসহ
সর্বদাই তুমি আমার সঙ্গে থাকো …খণ্ড খণ্ড
জিজ্ঞাসাকে আপৎকালীন ধৈর্য শেখাও যত্ন করে ।
বোঝো , আমার প্রথাবিমুখ গ্রহণ খোলা উষ্ণতাকে
পছন্দ করে না কেউ , জেদকে আরও নিবিড় ঘন ভালোবাসি
বাঁশের জাহাজ নিজে বানাই নক্সা কেটে পালিশ করি
ধান ভানতে শিবের গীতও মাঝেমধ্যে কাজে লাগে ।
তোমার মনে বসে থাকলে গঙ্গা পদ্মা এক হয়ে যায়
তুমি জানাও অস্ত্র হচ্ছে মুখের কথা দু পাঁচ টাকার
চলতি কলম , এমন কি স্থির ঝকঝকে ধার ভালোবাসাও
অস্ত্র সমতূল্য আগুন । ধারাবাহিক মাটির মায়ায়
ভিটে আগলে আছি বলেই ঠিক করেছি আলাদা বা
নতুন ভিটে বানাব না,বাতি জ্বালব তীর্থভূমির পায়ের পাতায়।
একই সঙ্গে অস্ত্র ব্যবহারের ইচ্ছে ক্রমে আমার কমে আসছে
ধারণা হয় ধীরে ধীরে তোমার মনের ভেতর আমি
তোমার লেখা আত্মকথার স্মৃতিসহ পুরোপুরি মিশে যাব ।
বিশ্বরুপ
কাচের চুড়ি মেলার মাঠ দোলনা চড়তে দ্বিধা রেখেই
রঙ বেরঙের বেলুন ফোলানো দেখছিলে লজ্জাসহ
কাচ্চাবাচ্চা বুড়োবুড়ি সবাই ব্যস্ত হয়ে খুঁজছে ।
বিশ্বরুুুপের সারাংশটাই আপনজনকে খুঁজে পাওয়া
যন্ত্র মাপছে ওজন এবার মুখের কথায় বৃষ্টি পড়ুক ।
ময়না যদি ভাগ্য বলে হাত দেখাতে আপত্তি নেই
বিষয়টা তো রোজ ঘটে না সুতরাং বেশ আনন্দময়
আনাড়ি ম্যাজিক দেখায় যুক্তিবাদীর সদস্যরা ।
তুমি খেয়াল করলে একটা সস্তা দামের গীতা নিতাম
আমার আপনজন তো আমি নিজেও নই ।হয়ত আর্য
ঋষির বাক্যে তোমায় আরও মাণিক্যময় ভালো লাগত
অবশ্য পা সারাক্ষণই মিস্টি গন্ধে ভিজে আছে ।
মাঝেমধ্যে মনে হয় যে জন্মে বড্ড ভুল করেছি
যেমন মেলা মহাভারত গ্রহ তারার লীলা খেলা
অজন্তা ইলোরা কিংবা কোণারকের সূর্যরথের
দুরন্ত টান এক্কেবারে না থাকাটাই ভাল ছিল
কেবল তুমি আছ বলেই আমার মেঠো স্বপ্নকুঞ্জে টিকে আছি ।
কুমারখালি
শয়নকালে কেন আমায় ভক্তিগীতি শোনাতে চাও
তার চে বরং ভূগোল পড়ো, দেশবিদেশের প্রাণকাহিনী
চেনা অবয়বের চেয়ে অচেনাই এই সময়ে ধীরে ধীরে
পাথরপ্রতিমা আমারও । দিনরাত্রির অবিমিশ্র
আকর্ষণে পুতুল পুতুল অভিজ্ঞতার ঘুম পেয়ে যায়
ঘুমের ভেতর হঠাৎ আমায় ডাকতে আসে তন্দ্রা সাহা ।
ছেলেবেলায় ঝিলের ধারে বাড়ি ছিল , টলতে টলতে
উঠে পড়ি । ফেরার আগে হাঁটতে হবে অনেকটা পথ
রবার্ট ব্লেকের আগেই বোধ হয় দস্যুমোহন পড়েছিলাম ।
কুমারখালির গ্রামবার্তা প্রকাশিকা এবং কাঙাল
হরিনাথের মীর মশারফ বিষাদসিন্ধু ধর্মগ্রন্থ
না আসলে প্রেমকাহিনী ?আড়াল চিঠি লেখার রেওয়াজ
যুক্তিকেও পাত্তা দেয় না ,সে কারণেই তোমায় আমি
ভূগোল ভেঙে চিন্তা করি , দেহের বয়স তুচ্ছ কারণ ।
মৌল অনুভূতির কার্য বিরোধিতা বজায় রাখা
তবু তুমি আছ বলেই বাধ্য হয়ে জানাচ্ছি যে
আর যা খুশি বলো কিন্তু ফিরে আসতে না কোর না ।
অমলতাস
তুমি আমার হজরতের লালন করা মেঘপ্রতিমা
এখন সুরারোপের ফলে ধর্ম বর্ণ নিরপেক্ষ
আয়না কেন উল্টো লেখা সহজবোধ্য সোজা বানায় ?
দ্বিধাগ্রস্থ মৌমাছি বা অতীতমুখী ঘনকৃষ্ণ
অলকলতার ছায়াচ্ছন্ন নড়া চড়া টের পেয়ে যাই ।
শঙ্খমালা মানিকমালার গাথা বলতে আগ্রহ নেই
ফলে আমার যুদ্ধরত অনুভবে টুকরো টুকরো ছায়া ওড়ে ।
অসুস্থ হাত অপরপক্ষে খাঁচার ভেতর অচিনপাখি
আচ্ছা এখন রাত্রি না দিন ?রুপান্তরের অন্তঃস্থলে
জলকণিকার ঝাড়লণ্ঠন দুলছে অবাঙমানসগোচর ।
কে না জানে ভঙ্গিপ্রধান তথাকথিত অবয়ব
যেমন তোমার তাকিয়ে থাকা আত্মপ্রকাশ গ্রহণ করেই
মিলনপথের সৃষ্টি হলো , নমুনা দিই অমলতাসের
আচ্ছা তোমার মনে আছে …আমায় কথা দিয়েছিলে
যাবার আগে অন্তত এই বন্ধ ঘড়ি সারিয়ে যাবে ।
পুষ্পকাণ্ড
ভূতপূর্ব মাঙ্গলিকও শয়ন শেখায় অসমতল ।
ধ্বনিসংযোজনের ফলে ছায়া সমেত পুষ্পকাণ্ড
উড়তে থাকে আমার তোমার মনের মধ্যে ,পাঁপড়ি ঝরে ।
স্মৃতিশাখার নয়নাভিরাম স্পর্শ আমি টের পেয়েছি
সে কারণেই আমায় আমি তেমন ভাবে ভালোবাসি
যেন বা এই আমার ভেতর অন্যরকম তুমি আছো ।
প্রশ্নভর্তি অসমতল প্রশ্নভর্তি তদ্ভব এই জীবনযাপন
মাঝে মধ্যে প্রিয় কিছু শূন্যচিহ্ণ লুঠ হয়ে যায় ।
দৃষ্টিযুক্ত অবাক চোখে সবুজ মোহ কিংবা ঘন
হাওয়ার আদল দেখতে পেলে তোমার সঙ্গে আমার আবার
ঘনিষ্ঠতা বোঝে কেবল ভূতপূর্ব অখণ্ড সেই পুষ্পকাণ্ড ।
তোমার চলার পথে সদাই আমার আকাশ লেগে থাকে।
এ মঙ্গলে সচরাচর উপযুক্ত তুলনার খোঁজ
আর যে করুক সুপ্রাচীন সংগীত কখনো করবে না
এখন আমি আদ্যিকালের মন্ত্রগুপ্তি তোমার ভেতর
বুনে যাব । ফুঁ দিয়ে দীপ না নেভালে ধরে নিও
যথাস্থানে না থাকাতে যন্ত্র অচল হয়ে আছে ।
নদীমাতৃক
তোমার কথা লেখা কিংবা না লেখাও সামান্য নয়
তার চে’ বরং পরাগ মাখি অসম্পূর্ণ সমাধানে ।
যুগোলকিশোর শান্তি পাবেন পথিক শুনবে একান্তমন
তোমার জন্য চললে পথের অসামান্য আনন্দ হয়
ছায়ার পাশে ছায়া দোলে অসংলগ্ন মিলনমধুর ।
দূরে সবুজ সীমার মাঝে নীল আকাশের সহস্ররুপ
ঘনিষ্ঠ ছায়ার সঙ্গে আর্দ্র শরীর প্রবাহিত ।
সংসারে যে একা সেও তোমার সঙ্গে সমতল ও
সমুদ্র বা বনভূমির লাবণ্যময় অভিন্নতায়
ঘুমে জাগরণেও দেহের অন্ধকারকে খুলে ফ্যালে ।
বিকেল শেষে সূর্য ডুবলে শঙ্খ বাজবে মঞ্জুরিত
নির্ভরতায় ।ধারণা ছিল না তুমি অভব্য এই
ব্রাত্য মাঝির স্বপ্নমুখর প্রতিবেশী ।সংবেদনের সীমান্তেও
নক্ষত্রের মৃদুচিহ্ণ ভরা সবুজ শিলালিপি
পাপড়ি ভেজা উপলক্ষ । শঙ্খ বাজছে মনে ,এখন
যুগোলকিশোর শান্তি পেলে শান্তনদীর কি আসে যায় ?