Sunday 18 October 2015

শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং অবিভক্ত বাংলাদেশ
-এমাজউদ্দীন আহমদ
অন্নদাশঙ্কর রায় পশ্চিমবঙ্গের একজন খ্যাতনামা লেখক ও বুদ্ধিজীবী। অখণ্ড ভারতের অন্যতম প্রবক্তা, ধর্মনিরপেক্ষতার এবং বাঙালি সত্তার প্রচারক। সেই বাঙালি সত্তার প্রচারককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘বাঙালিদের এই রাষ্ট্রে (বাংলাদেশে) পশ্চিমবঙ্গ কেন যোগ দেয় না? তা হলে তো ২০ কোটি বাঙালি এক হয়ে যুক্তবঙ্গ রচনা করত। সেটা কি আপনারা চান না? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তবঙ্গ যদি ভারতের বাইরে হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গ তাতে রাজি হবে না, কারণ আপনারা যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন, আমরাও তেমনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়েছি। পরে সংবিধান রচনা করি। সে সংবিধানে বিচ্ছিন্নতা নিষেধ।’ এরপরও তিনি বলেছেন, ‘তা ছাড়া বাংলাদেশ এখন মুসলিম বাংলা। বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনীর (Organisation of Islamic Conference-OIC) সদস্য’ তার সাথে যোগদান অসম্ভব; তিনি অবশ্য বলেননি, ভারতের ভেতর হলে পশ্চিমবঙ্গ কী করবে। বাংলাদেশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলে নিশ্চয় অন্নদাশঙ্কর রায়ের কোনো আপত্তি থাকবে না, তা ধরে নেয়া যায়, যেমন নেই লালকৃষ্ণ আদভানিদের, নেই আরএসএস এবং শিবসেনা পরিবারের নেতৃবৃন্দের।
এ দেশের হীনম্মন্যতায় আক্রান্ত কিছু বুদ্ধিজীবীর সুখ-সুষুপ্তিও অবশ্য এ ধরনের। কথাগুলো বলছি এ জন্য যে, অন্নদাশঙ্কর রায়ের মতো খ্যাতনামা লেখকের চিন্তা-ভাবনায় দেখা যায় একধরনের পীড়াদায়ক সঙ্কীর্ণতা। ‘মুসলিম বাংলার’ জনগণের ইতিহাস যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেই সীমিত। এর বাইরে কোথাও ইতিহাসের কোনো পর্যায়ে, এদের কার্যক্রমের যেন কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। স্বাধীনতা অর্জনের পরে তারা বাংলাদেশকে নাকি ‘মুসলিম বাংলায়’ পরিণত করেছেন। বাংলাদেশকে ওআইসির সদস্য বানিয়েছেন। কিন্তু ভারত? ভারত, তাদের ভাবনায়, রূপান্তরিত হয়েছে এক বিশ্বজনীন এককে, যেখানে ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সঙ্ঘ পরিবারের সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠী। তা-ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে। যা হোক, এসব কথা বলছি এ জন্য যে, ভারত বিভাগের সার্বিক গতিসূত্রের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে যদি অন্নদাশঙ্করের মতো রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ১৯৪৭ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো রাজনৈতিক নেতা বাংলাকে অবিভক্ত রাখার জন্য কী কী প্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন, তা একবার স্মরণে আনতেন। এসব কথা অবশ্য তারা স্মরণ করবেন না, কেননা তা হলে তারা নিজেদের সঙ্কীর্ণতা, ভেদবুদ্ধি ও ধর্মান্ধতার গাঢ় অন্ধকারে নিজেদের অস্পষ্ট চেহারা দেখে ভয়ে আঁতকে উঠতে পারেন। বাংলাদেশকে ‘মুসলিম বাংলা’ বলে হেয় করবেন, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গকে ‘হিন্দুবঙ্গ’ বলতে তারা নারাজ।
অবিভক্ত বাংলার জননন্দিত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘বাংলাকে যদি বৃহৎ বা মহৎ হতে হয়, তা হলে তাকে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে। তার নিজস্ব সম্পদ, নিজস্ব আর্থিক সঙ্গতির ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিজের ভাগ্য নিজেই নির্ধারণ করতে হবে। অন্যদের পীড়ন থেকে মুক্ত হতে হবে।’ (If Bengal is to be great, it can only be so if it stands on its own legs... It must be a master of its own resources and riches and its own destiny... It must cease to be exploited by others)। এরও মাসখানেক আগে, ১৯৪৭ সালের ১৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী সাহেব বলেছিলেন, ‘বাংলা বাঙালিদের এবং বাংলা অবিভাজ্য’ ("Bengal belongs to Bengalees and Bengal is indivisible". Star of India, 18 March 1947.")
বাংলা অবিভক্ত থাকলে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যে বিশ্বসভায় মহত্তর অবস্থানে অধিষ্ঠিত হবে, সে সম্পর্কে ২৭ এপ্রিল বিবৃতিতে সোহরাওয়ার্দী বলেন, ‘সত্যিই এটি (স্বাধীন বাংলাদেশ) একটা মহারাষ্ট্ররূপে আবির্ভূত হবে এবং ভারতবর্ষে সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ ও অগ্রগতিসম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এ রাষ্ট্রে জনগণের জীবনমান হবে উন্নততর এবং জাতি হিসেবে তা অর্জন করবে সর্বোচ্চ স্থান। প্রাচুর্যে ভরা এই ভূমিতে কৃষির উন্নতি হবে সর্বাধিক। শিল্প-বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে সন্তোষজনক। কালে এই রাষ্ট্রটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ও প্রবৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’ (It will be a great great country indeed, the richest and the most prosperous in India, capable of giving to its people a high standard of living, where a great people will be able to rise to the fullest height of their stature, a land that will truly be plentiful. It will be rich in agriculture, rich in industry and commerce and in course of time will be one of the most powerful and progressive states in the world."।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শুধু বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হননি, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তার আবাস, কলকাতার ৪০ নং থিয়েটার রোডে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস দলের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠকে সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া রচনার জন্য যৌথ কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই কমিটির সদস্য ছিলেন মুসলিম লীগ থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নিজে, খাজা নাজিমুদ্দীন, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, কুষ্টিয়ার ডা: এ এম মালিক, ঢাকার ফজলুর রহমান এবং লীগ সম্পাদক আবুল হাশিম। কংগ্রেস ও হিন্দু সম্প্রদায় থেকে এই কমিটিতে সদস্য মনোনীত হন শরৎচন্দ্র বসু, কিরণ শঙ্কর রায়, নলিনী রঞ্জন সরকার এবং সত্য রঞ্জন বকশী (আবুল হাশিম, In Retrospect, 1998, পৃষ্ঠা ১৬৫)। শুধু সোহরাওয়ার্দী কেন, খাজা নাজিমুদ্দীনও বলেন, ‘এটি আমার সুচিন্তিত অভিমত যে, মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা জনগণের স্বার্থে সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থা এবং বাংলার বিভক্তি বাঙালিদের স্বার্থে হবে বিষবৎ’ ("It is my considered opinion that an independent sovereign Bengal is in the best interest of its people whether Muslims or non-Muslims and I am equally certain that partition of the province is fatal to the interest of Bengalees." Ibid)।
যৌথ কমিটি ১৯৪৭ সালের ১৯ মে খসড়া সংবিধান রচনার কাজ সমাপ্ত করলে ২০ মে কলকাতার ১ নম্বর উডবার্ন পার্কে শরৎ বসুর বাড়িতে সেই খসড়া সংবিধানে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার যে রূপরেখা অঙ্কিত হয় তা ছিল নি¤œরূপ :
১. বাংলা হবে এক স্বাধীন রাষ্ট্র। স্বাধীন বাংলা ভারতের অন্যান্য অংশের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। ২. সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন বাংলার আইন পরিষদ গঠিত হবে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে, যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচিত সদস্য সমন্বয়ে। হিন্দু ও মুসলিম সদস্যদের সংখ্যা নির্ধারিত হবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে। তফসিলি সম্প্রদায়ের আসনসংখ্যাও নির্ধারিত হবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে। ৩. রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন বাংলা ব্রিটিশ রাজ কর্তৃক স্বীকৃত হলে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ ভেঙে যাবে এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সমানসংখ্যক মুসলমান ও হিন্দু (তফসিলি সম্প্রদায়সহ) মন্ত্রী সমবায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলমান। ৪. নতুন সংবিধান অনুযায়ী আইন পরিষদ এবং মন্ত্রিপরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বিভাগসহ সব কর্মে হিন্দু ও মুসলমানেরা সমান হারে নিয়োগ লাভ করবেন। ৫. সংবিধান রচনার লক্ষ্যে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট একটি গণপরিষদ গঠিত হবে। সদস্যদের মধ্যে ১৬ জন হবেন মুসলমান এবং ১৪ জন হিন্দু। প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভা কর্তৃক তারা নির্বাচিত হবেন। ৬. ১৯৪৮ সালের জুন বা তার আগে ব্রিটিশ রাজ স্বাধীন বাংলা সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা রাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার মধ্যমণি ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তাকে অকৃত্রিম সহায়তা দান করেন শরৎ বসু এবং আবুল হাশিম। এসব তথ্য অন্নদাশঙ্কর রায় জানেন। জানেন আজো অবিভক্ত বাংলা গঠনের সুখ-সুষুপ্তির গোপন স্পৃহা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে যাদের প্রতিক্ষণ তাড়া করে ফিরছে, তারাও। যেসব যুক্তির ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা করেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম ও শরৎ বসু, তার আদর্শিক ভিত্তি সম্পর্কে আবুল হাশিম নিজেই বলেছেন, ‘বাংলার হিন্দু ও মুসলমানেরা তাদের স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখে যৌথ উদোগে প্রকৃতি এবং ভূমিজ পরিবেশের সাথে পূর্ণ সঙ্গতি রক্ষা করে যে অপূর্ব সাধারণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গড়ে তুলেছেন মানবিক উৎকর্ষের বিবর্তনে বিশ্বের যেকোনো জাতির অবদানের নিরিখে তা শ্রেষ্ঠতর।’ ('Hindus and Muslims of Bengal preserving their respective entities, had by their joint efforts, in perfect harmony with the nature and climatic influence of their soil developed a wonderful common culture and tradition which compare favourably with the contribution of any nation of the world in the evolution of man.'- Abul Hashim. In Restrospect 160)।
কিন্তু মানবকল্যাণ হিন্দু-মুসলমানদের যৌথ অবদান শ্রেষ্ঠতর হলে কী হবে, অখণ্ড ভারতের প্রবক্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এর কারণও ছিল। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের ‘লৌহমানব’ রূপে খ্যাত বল্লভভাই প্যাটেল অবিভক্ত বাংলার পরিকল্পনাকে চিহ্নিত করেছিলেন একটা ‘ধূর্ত কৌশল’ রূপে। ১৯৪৭ সালের ২৩ মে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলার অমুসলিম জনসমষ্টিকে বাঁচানোর জন্য বাংলার বিভক্তিকরণ অপরিহার্য।’ (Bengal has got to be partitioned if the non-Muslim population is to survive')। ১৯৪৭ সালের ২৭ মে News Chornicle পত্রিকার প্রতিনিধি নরম্যান ক্লিফকে (Norman Cliff) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু বলেছিলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলার (অখণ্ড বঙ্গদেশের) স্বাধীনতার অর্থ হলো, বাংলায় মুসলিম লীগের আধিপত্য।’ তিনি আরো বলেন যে, স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা ভারতে বিভাজনমুখী ‘বলকান প্রক্রিয়ার সূচনা করবে’ (invite Balkanisation of India) এবং ‘বহু উলস্টার তৈরি করবে’ (Create many Ulsters')। স্বাধীন বাংলা পরিকল্পনা সম্পর্কে গান্ধীর প্রতিক্রিয়া ছিল আরো অদ্ভূত। আবুল হাশিম যখন এই পরিকল্পনার বিভিন্ন দিকের ব্যাখ্যা দিয়ে মহাত্মার সমর্থন আদায়ের জন্য সোদপুর আশ্রমে যান, তখন তিনি আবুল হাশিম সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলেন, সমগ্র বাংলায় যদি সাধারণ সংস্কৃতি বিদ্যমান থেকে থাকে, যা রবীন্দ্রনাথে প্রতিফলিত ও মূর্ত, তা হলে সেই সংস্কৃতি শুধু বাংলায় কেন, তা তো সমগ্র ভারতে রয়েছে। কেননা এর মূল উপনিষদে নিহিত। এই প্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলা কি স্বেচ্ছায় ভারতের সাথে মিলিত হবে? (In Restrospect, p167)। বাংলার সংস্কৃতি যে শুধু উপনিষদভিত্তিক নয়, তা মহাত্মাকে কে বোঝাবে?
মুসলিম লীগের সদস্য হয়ে এবং মুসলিম লীগের দাবি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিকল্প হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার পরিকল্পনাকারী, সোহরাওয়ার্দী যে মহল থেকে ভয়ের আশঙ্কা করেছিলেন সেই মহল অর্থাৎ মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কিন্তু এই পরিকল্পনায় সাগ্রহে সায় দিয়েছিলেন। তার নিজের কথায়, ‘আমি আনন্দিত হবো। কলকাতা ছাড়া বাংলার আর কী মূল্য রয়েছে? তারা বরং সম্মিলিত থাকুক। স্বাধীন হোক। আমি নিশ্চিত, তারা আমাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবেন।’ ('I should be delighted. What is the use of Bengal without Calcutta? They had much better remained united and independent. I am sure that they would be on friendly terms with us.' The Transfer of power. XP451, 26 April 1947)। কিন্তু জিন্নাহ চাইলে হবে কী, বর্তমানে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের অন্যতম প্রধান গুরু এবং হিন্দু মহাসভার সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ১৯৪৭ সালের ২ মে ভারতের গভর্নর জেনারেলকে লেখা এক পত্রে বলেন, ‘যেকোনো অবস্থায় আমরা ভারতের অবশিষ্ট অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারি না এবং যে বিষয়ে (অখণ্ড বাংলা) কোনো বিবেচনায় আমরা কোনোরূপ সমঝোতার জন্য প্রস্তুত নই।’ ('We do not in any case want to be cut off from the rest of India and we are not prepared to make any compromise on this issue on any consideration whatsoever.' Ibid, p 555-6)। তাই তিনি হিন্দুদের স্বতন্ত্র ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, জীবনব্যবস্থা ও আচার রক্ষার জন্য স্বাধীন বাংলার বিরুদ্ধে অদম্য এক আন্দোলন গড়ে তুললেন এবং বাংলায় হিন্দুদের আবাসভূমির দাবিতে (Homeland for the Hindus) পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠার স্লোগান তোলেন।
হিন্দুদের স্বার্থরক্ষা ছাড়াও ওইসব নেতার চিন্তায় ছিল পূর্ব বাংলা এবং পূর্ব বাংলার মানুষ সম্পর্কে একধরনের তাচ্ছিল্যভাব। মুখার্জির কথায়, ‘বাংলা যদি পাকিস্তান হয়ে যায়, বাংলার হিন্দুরা তখন স্থায়ীভাবে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। যেভাবে হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু সমাজের ওপর আক্রমণ চলেছে, তা বিচার করলে তখন বাঙালি হিন্দুর সংস্কৃতির সমাপ্তি ঘটবে। কিছু নিম্নবর্ণের হিন্দুর ইসলাম গ্রহণের ফলে সৃষ্ট, মুসলমানদের খুশি করতে গিয়ে প্রাচীন হিন্দু সংস্কৃতির বলি দেয়া হবে।

No comments:

Post a Comment