Friday 22 May 2015

একটি তুচ্ছ মৃত্যু / ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ

ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষার কবি। বাংলা ভাষারও প্রধান কবিদের অন্যতম। ঈশান বাংলা মানে বরাকের এই শ্রদ্ধেয় কবির এই কবিতাটি বারবার পড়ার মত। আগে পড়িয়েছি। আবার পড়াই
একটি তুচ্ছ মৃত্যু/ ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ
ওসমান চাচার কাফন দাফন হচ্ছে।
নাজুক রোদে চারজন লোক পড়ছে নামাজ-এ-জানাজা।
পৃথিবীর মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গা খর্চা হবে।
কিছু দূরে রিফুজিলতার ছেঁড়া বোরখা পরা একটা খেজুর গাছ
পাশে অপুষ্ট শিশুর মতো দু-একটা কচুঝোপ।
ওসমান চাচা তেমন কেউকেটা নয়--- মুরুব্বি নয়।
তার এন্তেকাল খুবই সাধারণ একটা ঘটনা।
খোদার দরবার পর্যন্ত পৌঁছোবার মতো খবরই নয়!
ফিরিস্তারাও এসেছেন কি আসেন নি।
ওসমান চাচার দুই ছেলে---
রোজগার করে। পেলে খায়, না পেলে রোজা---
বছরের যে কোন দিন।
এ হেন লোকের মৃত্যুতে কি আর শোকপালন হবে।
তবু গণকঠাকুরের বিধবা আঁচলের খুঁটে
দু ফোঁটা চোখের জল মুছে মনে মনে বলল---
“ভগবান, লোকটাকে পায়ে ঠাঁই দিয়ো”
বিপদে আপদে কেঁদে পড়লে দিত এক আধ কাঠি চাল,
গণকের বাৎসরিক শ্রাদ্ধে—দু একটা বাঁশ ,
ছেলের পৈতের দিনে এক কাঁদি কলা, আধসের দুধ।
মানুষ যখন মানুষের রক্তের জন্য
চিৎকার করে ঈশ্বরের আসন কাঁপিয়ে দিল
সেদিন বলেছিল—এখন ফিরিস্তারা ঘুমিয়ে আছে।
আমল করছে শয়তান, তবে শেষ পর্যন্ত জেতেন আল্লা পাক।
ভয় নেই। আমার জোয়ান ছেলেরা তোর বাড়ি পাহারা দেবে।
আল্লা আছেন বেটি।
যাও চাচা। তুমি মানুষের জান নিতে পারো নি।
রক্তে তোমার অরুচি।ছি! তুমি কাপুরুষ।
আমাদের মতো বীরের দুনিয়ায় তোমায় মানায় না।





No comments:

Post a Comment