Sunday 3 April 2016

বাংলার ইতিহাসের একটি চুম্বক- হায়দার মুন

আমরা জানি যে আমরা বাঙ্গালিরা সঙ্কর জাতি , আমাদের আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে মূলত অস্ট্রিক – দ্রাবিড় , আলাপীয় আর্য এবং মঙ্গোল রক্ত। কিন্তু একেবারে যদি মূল আদিবাসীদের কথা বলা হয় তবে তা হোল অস্ট্রিক এবং দ্রাবিড় । অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সাথে মিল ছিল বলে প্রাচ্য-ভারতের জন গোষ্ঠীর এক অংশকে আদি অস্ট্রাল এবং নৃতাত্ত্বিক পরিভাষায় অস্ট্রিক নামে ডাকা হয়। দক্ষিণ ভারতের জন গোষ্ঠী দ্রাবিড় নামে অভিহিত। মূলত অস্ট্রিক – দ্রাবিড় রা ভূমধ্যসাগরীয় জনগোষ্ঠী র জ্ঞাতি। সেখান থেকেই তারা জলপথ বা উপকূলীয় স্থলপথে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর দাক্ষিণাত্যতে আর বাংলায় বসবাস শুরু করে। এখানে তারা এসেছে বিভিন্ন সময়ে । আবার হিমালয় মালভূমি অঞ্চল থেকে এবং লুসাই পর্বত বেয়ে এসেছে মঙ্গোল রা। অস্ট্রিক দ্রাবিড়ের পরে যারা এসেছে তারা আলপাইনি বা আলাপাইনি আরযভাষী ,এরা এসেছিল মূলত সমুদ্রপথে। নিগ্রো বা নিগ্রেটো রা যারা এসেছিল তাদের সংখ্যা নগণ্য। অতএব এই শঙ্করের মাঝেও কোন কোন গোষ্ঠীর মানুষ মনন উৎকর্ষের ফলে প্রাধান্য লাভ করে। দুর্বল অস্ট্রিক – দ্রাবিড় রা অনেক কাল ছিল অরণ্যে। নৃতাত্ত্বিকদের মতে আলাপাইনি আর্যভাষী বহিরাগত গোষ্ঠীই বাংলা – বিহার – উড়িষ্যা তে উন্নত মনন ও হাতিয়ার প্রয়োগে প্রাধান্য লাভ করে। পরবর্তীতে বিবর্তনের ধারায় আদি আস্ট্রিক ও দ্রাবিড়দের দাস ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগানদাতায় পরিণত করে। পরে এই বহিরাগত আরযরাই সমাজে পেশা অনুসারে ব্রাহ্মণ ,বৈদ্য , ও কায়স্থ রূপে পরিচিত হয়। আর অস্ট্রিক – দ্রাবিড় বর্গের মানুষরা নিজেদের মাঝে রক্তের মিশ্রনের পরও অস্পৃশ্য প্রাণী হয়ে থাকল এদের মাঝে যারা আরয দের সেবাদাসে পরিণত হোল তারা হয়ে গেল নাপিত,ধোপা,কর্মকার,মুচি,মেথর,চড়াল,ডোম, অর্থাৎ অস্পৃশ্য। এর মাঝে জৈন, বৌদ্ধ , ইসলাম কোন ধর্মই এদের সমাজ-ভুক্ত করতে পারেনি। কোন ধর্মই সনাতন ধর্মের যার আরেক নাম হিন্দু ধর্ম তাঁর লৌহ বর্ম ভেদ করতে পারেনি। এর মাঝে এই নির্যাতিত মানুষরা সনাতন ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে কিন্তু তাদের জাতে গ্রহণ করা হয়নি আবার তারা সনাতন ধর্মে ফিরেছে সে যে কারনেই হোক। এরপর ইসলাম আসল ,দরবেশদের প্রচারের কথায় কাজে মুগ্ধ হয়ে পেশা বদলের উপায় না থাকা সত্ত্বেও উচ্চ বর্ণের হিন্দু – বৌদ্ধের ঘৃণা ,পীড়ন মুক্তির লক্ষ্যে কিছু না জেনে বুঝেই আরবের ধর্ম গ্রহণ করে। ইসলাম প্রচারকারীরা এ অঞ্চলের মানুষে বঞ্চনার কথা বুঝতে পেরে দীক্ষিত পুরুষ মাত্রেরই আরবি শেখ পদবীতে ভূষিত করে। এরপরের ইতিহাস ত সহজ ইতিহাস, এলো তুর্কি, এলো মুঘল তখন শেখ এর চেয়ে আবার খান এর কদর বাড়ল পনের শতক থেকে মুসলমানরা খান উপাধি নিতে থাকে। পরবর্তীতে যারা ধনী হয়ে গেল তাদের মধ্যে যারা শেখ তারা নিজেদের আরব এর বংশ এবং যারা খান তারা তুর্কি মঙ্গলদের বংশ বলে পরিচয় দিতে থাকলো। এ তরিকা আজও আছে। এর মাঝে চরম অস্পৃশ্য রা ইসলাম কবুল করে জোতদার, তালুকদার, শিকদার হয়েছে। আরবি-ফরাসি শিখে কেউ কেউ ব্রাহ্মণদের বিকল্প হিসেবে ,ইমাম,কাজি,দেওয়ান,নায়েব শিক্ষক হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় যে খুব কম হলেও সেই অস্ট্রিচ দ্রাবিড় এর কিছু অংশ কিছুটা হলেও ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছিল আরযদের সেবাদাস হবার কল্যাণে যা কিনা সনাতন ধর্মের অধীনে ছিল অকল্পনীয় এবং এক্ষেত্রে স্থানীয় দের সংগ্রাম ছিল খুবই কঠিন।
আমাদের সভ্যতাকে মনে করা হয় প্রায় দশ হাজার বছরের পুরনো সেসময় আমরা কতটুকু সভ্য ছিলাম সেটা বড় কথা নয়, কথা হোল আমরা ছিলাম,কেমন ছিলাম সে প্রশ্ন আসলে বলতে হয় সামন্ত যুগেও বাংলা ভাষা ভাষী অঞ্চল কখনো এক ছিল না। এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে কোন একক চেতনা বা জাতীয় চেতনাও ছিল না। তখন এই ভূভাগ বিভক্ত ছিল ছোট ছোট রাজ্যে তাদের কতকগুলোর নাম জানা যায় আবার কতক-গুলো সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। ষোলশ ছেষট্টি সালের আগ পর্যন্ত আজকের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল আসলে একক শাসকেরই অধীনে ছিল না। মুঘলরা ষোলশ ছেষট্টি সালে চট্টগ্রাম জয় করলে বাংলা একক শাসকের অধীনে আসে। কাজেই মুঘল আমলের আগে বিশেষ করে ইংরেজ আমলের আগে উনিশ-শতকের আগে বাংলাদেশ বা বাংলা ভাষী অঞ্চল কখনই এক ছিল না,ঐক্যবদ্ধ ছিল না ।আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য বিগত দুই হাজার বছরের মধ্যে ধরলে এবং অশোক সহ ধরলে তেইশস বছরের মধ্যে আমরা বাঙ্গালী গোত্রের বাঙ্গালী একজন মাত্র স্বদেশী রাজার নাম পাই,তার নাম শশাঙ্ক । তাও আবার ভিন্নমত আছে। শশাঙ্ক মুর্শিদাবাদ – কর্ণসুবর্ণে রাজত্ব করতেন, কেউ কেউ বলেন তিনি আসাম থেকে এসেছিলেন। এই শশাঙ্ক ছাড়া আর কোন নাম পাওয়া যায় না। এরপর অনেক পরে যার নাম পাওয়া যায় তাঁর নাম দিব্যক । দিব্যক, রুদ্রক আর ভীম নামে তিন পুরুষ। এই ত, আর কোন বাঙ্গালী শাসক পাই না। আর হুসেন শাহ্‌র নাম শোনা যায় কিন্তু হুসেন শাহ সৈয়দ হলে বাঙ্গালী হন না , সে যুগে ত প্রশ্নই উঠে না। এছাড়া বাকি থাকে রাজা গণেশ যাকে বাঙ্গালী বলে স্বীকার করলেও করা যায় আবার না করলেও ক্ষতি নেই। কারণ গণেশ যদি ব্রাহ্মণ হন তাহলে বাঙ্গালী হতেই পারেন না। ব্রাহ্মণ রা বহিরাগত। এই গণেশের ছেলে জালালুদ্দিন বা মহেন্দ্র এবং তাঁর ছেলে পুলেরা বার তের বছর রাজত্ব করেন। এ ছাড়া বাঙ্গালী কখনো উনিশশ সাতচল্লিশ এর আগে রাজত্ব করেনি তাও আবার প্রশ্ন সাপেক্ষ উনিশস একাত্তরের আগ পর্যন্ত। আমাদের বুঝতে হবে ইতিহাসের চেতনা দিয়ে যদি আমরা উদ্বুদ্ধ হতে চাই তাহলে আমাদের মানতে হবে আমরা দু হাজার বছর ধরে নির্জিত এক জাতি।আমরা দুই হাজার বছর ধরে নির্জিত হয়েছি বিজাতি,বিভাসি দের দ্বারা । আমাদের আসল সগোত্রীয় জাতি আজও নিরন্ন,নিপীড়িত,বঞ্চিত।আমাদের বুঝতে হবে আমরা আসলে হাড়ি, ডোম,মুচি,মেথর,সাঁওতাল,,খাসিয়া দের ই উত্তরসূরি বা বংশ। যারা বহিরাগতদের অত্যাচারে বনে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিল তারাই আজ সাঁওতাল,খাসিয়া,গার নামে অভিহিত যারা আসলে আসল বাঙ্গালী আমাদের আসল পূর্বপুরুষ। অস্ট্রিক – মঙ্গোল দের যে সংস্কৃতি সেটাই বাঙ্গালীর রক্তের সংস্কৃতি যেখান থেকে এসেছে সংখ্যা, যোগ,দেহতত্ত, এগুলো মঙ্গলদের দান আর নারী দেবতা ও জন্মান্তর অস্ট্রিক দের দান। এসব বাঙ্গালীদের মাঝ থেকে মুছে ফেলা যাবে না। বাঙ্গালী বৌদ্ধ, ব্রাহ্মণ্য , ইসলাম প্রভৃতি ধর্ম গ্রহণ করেছে ঠিকই কিন্তু সংখ্যা,যোগ,তন্ত্রের প্রভাব ছাড়তে পারেনি।
তাহলে দাঁড়ায় যে আমরা যারা আজকের বাঙ্গালী তারা হোল মূলত অস্ট্রিক – মঙ্গলদের বংশধর, এটা এখন নৃতাত্ত্বিক ভাবে প্রমাণিত ,আর যদি তাই হয় তাইলে আমদের শতকরা নব্বই ভাগ বাঙ্গালীর যারা আমাদের বর্তমানের বাংলাদেশের বাঙ্গালী তাদের পুরব পুরুষ ডোম, কামার ,কুমোর, তাঁতি, ধোপা , নাপিত যারা হাযার বছরের নির্যাতিত বাঙ্গালী এবং তথাকথিত অচ্ছুৎ । বাঙ্গালী চিরকাল বিদেশি শাসিত। বাংলাদেশে যেসব ধর্ম সেগুলোও বিদেশ থেকে আগত । আমাদের যতটুকু আছে তা আমরা অনেক কষ্টে ছিনিয়ে নিয়েছি এবং কিছুটা পরিস্থিতি আমাদের দিয়েছে । আরযদের কাছ থেকে অনেক কষ্টে আমরা কিছুটা নিয়েছি তাদের সেবাদাস হবার কল্যাণে আর অনেক পরে ব্রিটিশরা দিয়েছে তাদের স্বার্থে।
উপরের আলোচনা থেকে বাঙ্গালী হিন্দু কে আলাদা করা খুব কঠিন কিছু না। বাঙ্গালী চিরকাল বিজাতি শাসিত বাঙ্গালীর প্রশাসনও ছিল উত্তর ভারতের। বাঙ্গালীর যে গৌরব আমরা করি তাঁর কোনটাই বাঙ্গালীর না। যেসব শিলালিপির কথা বলা হয় তা বাঙ্গালীর না। এগুলো বহিরাগতদের ইতিহাস । যারা বাঙ্গালী সেই আসল জনগোষ্ঠী অর্থাৎ হাড়ি, ডোম, চণ্ডাল,বাগদি যারা শূদ্র অস্পৃশ্য তাদের কথা বাঙ্গালীর বা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোথাও লেখা হয়নি। বাঙ্গালীর ইতিহাস লিখা হয়েছে অবাঙ্গালির কীর্তি কথা দিয়ে,যারা কিনা বহিরাগত। যারা সত্যিকারের বাঙ্গালী তাদের কিছু অংশ বহিরাগতদের সেবাদাস হয়ে কিছুটা উচ্চবর্ণ হয়েছে, মাথা তুলবার চেষ্টা করেছে। আজকে দাস, কালকে চৌধুরী বা মজুমদার,এরপরে দাস-গুপ্ত, সেন গুপ্ত হয়ে জাতে ওঠার চেষ্টা এখনো আছে। এক সময় এ দেশে শতকরা পঁচানব্বই ভাগ মানুষ বৌদ্ধ ছিল। সেসময় তাদের কোন জাতিভেদ ছিল না। তারপর আবার যখন ব্রাম্মনবাদের পুনরজাগরন হোল আবার নতুন করে বর্ণ বিন্যাস করা হয়েছে যা কিনা কৃত্রিম যার প্রমাণ আছে বল্লালচরিতে,কুলজিতে । আমাদের সঙ্কোচ ত্যাগ করে আমাদের পূর্বপুরুষের পরিচয় জানতে হবে।
আমাদের বুঝতে হবে বাংলাভাষী ভূখণ্ডে সেকালে আঞ্চলিক-ভাবে জীবন গড়ে উঠেছিল যা সর্ব বঙ্গীয় ছিল না এমনকি সামন্ত যুগেও না । ধর্মের ক্ষেত্রে হিন্দু আমলে সারা বাংলায় একক দেবতার পুজো হয়নি। কোথাও মনসার , কোথাও চণ্ডীর , কোথাও শিবের ,কোথাও বিষ্ণুর পূজা হয়েছে। সমাজের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল গ্রামে বাস অধিকারই ছিল না, ছিল না পুরো ভাত রেঁধে খাবার, তারা উচ্ছিষ্ট খাবে এটাই ছিল নিয়ম, যে নিয়ম বেধে দিয়েছিল উচ্চবর্ণের মানুষেরা। এমনকি ১৯৪০ এর আগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পায়ে জুতা পড়ার অধিকারও ছিল না।
ভারতে ইসলামের আগমন যেভাবেই হোক মুসলিমদের আগমন তিনভাগে হয়েছে। এটা আট শতাব্দী ধরে চলে। প্রথম পর্যায়ে আরবরা আসে সপ্তম এবং অষ্টম শতাব্দীতে। সিন্ধুতে এসে তারা কয়েকটি যুদ্ধ করে ফিরে যায়। মনে করা হয় মোহাম্মদ বীণ কাসিম প্রথম করাচীতে হানা দিয়েছিল। মনে করা হয় ভারতের প্রথম মসজিদও তৈরি হয় করাচীর বানভর নামক গ্রামে যা এখন পরিত্যক্ত নগরী। দশম এবং একাদশ শতাব্দীতে আসে আফগান এবং ফার্সিরা এবং তারপরে তুর্কি এবং মোঘলরা দ্বাদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে। প্রথম পর্যায়ের আক্রমণ থেকে খুব কম আরব থেকে যায় ভারতে, এবং ফার্সিদের মধ্যেও নাদীর শাহ এর আক্রমণের সুবাধে থেকে যায় অল্প কিছু ফার্সি।, কিন্তু তুর্কি বা মোঘল রা তা নয়, অনেক আফগান এখানে থেকে যায় এবং ভারতকে নিজের দেশ করে নেয়। এখানে লক্ষণীয় যে আক্রমণকারীদের ধর্মবিশ্বাস ইসলাম দিয়ে এদের চিহ্নিত করা হয় , কোন দেশ থেকে এসেছে তা দিয়ে নয়। অথচ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে বলা হয় না খ্রিস্টান আমল। এই যে আরব,আফগান,তুরকি হিসেবে চিহ্নিত না করে মুসলিম বা ইসলাম হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা সে যে কারণেই হোক না কেন এর মাঝেই রয়ে গেছে হিন্দু মুসলিমের বিভেদের মূল বীজ । কিন্তু আরবরা তাদের নিজ দেশে মার খায় মঙ্গলদের হাতে। ১২৫৮ সালের মধ্যে আব্বাসিদ বংশের রাজধানী বাগদাদ ধুলোয় মিশে যায়, তুরকিরা ইসলামের খলিফা পদ দখল করে। মঙ্গলদের অত্যাচারে অনেক ফার্সি ইরান থেকে ভারতে চলে আসে যারা ফার্সি সংস্কারে দীক্ষিত ছিল। এসব আগমনকারীদের জন্য ভারত হয়ে উঠল নিরাপদ ভূমি। একারণেই মধ্যযুগে যেসব ফার্সি লেখক ভারতের ইতিহাস লিখেছেন তারা মুসলিম নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় লিখেছেন এবং ভারতের ইতিহাসের শুরুটাই তারা করেছেন মুসলিম দের সময় থেকে যা ত্রুটিপূর্ণ বলাই বাহুল্য।
মোঘলরা কেন এত সমাদর পেল ভারতে। এজন্যে যে তারা থেকে গেল বিশাল না হলেও অনেকটাই এবং মোঘলরা ধর্ম প্রচারের দিকে খুব একটা আগ্রহ দেখায় নাই। তারা ছিল শাসক আর শাসন করবার জন্য তাদের ধর্ম প্রচারের প্রয়োজন ছিল না । বরং মোঘলরা বর্ণ হিন্দুদের কাছে টেনে নেয় । ধর্মান্তরিত নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়া জনগণ তাদের কাছে পাত্তা পায় নাই।, হোক তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সাধারণ জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন মোঘলরা ভারতে এখনো জনপ্রিয় কারণ তারা মুসলিমদের চেয়ে হিন্দুদের কে বেশী কাছে টেনে নিয়েছিল, বিয়ে-শাদি করেছে বর্ণ হিন্দু নারীদের। তাদের দরবারে সম্মানিত ছিল হিন্দুরা। এমনকি প্রধান সেনাপতিও ছিল মানসিংহ আকবরের। এই জন বিচ্ছিন্ন মোঘলদের কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত হয়ে ব্রিটিশদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার ইতিহাস আমরা কমবেশি জানি। ব্রিটিশদের খুব বেগ পেতে হয়নি ক্ষমতা পেতে। বাংলার নবাব সিরাজ উদ দৌলা এর ব্যতিক্রম না।
ইংরেজদের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হিন্দুরা বা বরন-হিন্দুরা দেরি করে নাই। কারণ মুসলিমদের শাসনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া। যদিও মুসলিম শাসনে তারাই ছিল লাভবান বর্ণ হিন্দু হবার কারণে। এখানে উল্লেখ্য নিম্ন বর্ণের হিন্দু এবং মুসলমান সবসময় সবকালেই বঞ্চিত থেকে গেল। হিন্দুরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে শিক্ষা থেকে শুরু করে আধুনিক জীবন এর সবকিছুই শিখতে লাগলো। সিপাহী বিপ্লবের পর ইংরেজরা তাদের কৌশল পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তারা শুধু হিন্দুদের ওপর নির্ভর থেকে নিশ্চিন্ত থাকতে পারল না। এবার তারা মুসলিমদের দিকে নজর দিল। কারণ হিন্দুদের মাঝে ইতিমধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রবল হয়ে উঠেছিল। এর জন্য ব্রিটিশের ডিভাইড এন্ড রুল এর প্রথা চালু হয়ে গেল ভারত বর্ষে । মুসলিমদের কে কিছু সুযোগ সুবিধা বেশী দেবার নিমিত্তে এবং তা ন্যায্য প্রমাণ করার জন্য ১৮৭২ সালে উইলিয়াম হান্টারকে দিয়ে লেখানো হয় “ ইন্ডিয়ান মুসলমান স “ নামক বই। এতে হান্টার দেখালেন মুসলিমরা বঞ্চিত। ব্রিটিশরা মুসলমানদের মাঝে শিক্ষা প্রসারে জোড় দিল। কিছু ছোট খাট চাকুরীও দেয়া হোল। ১৮৯০ থেকে মুসলিমদের মাঝে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকলেও মুসলিম নেতারা মক্তব মাদ্রাসার শিক্ষা দাবী করতে থাকে যা ছিল খুবই নিচু মানের। তা সত্ত্বেও সরকার বিশ শতকের প্রথম ২০/৩০ বছর মুসলমানদের সামনের দিকে ঠেলে নিতে চেষ্টা করে। মনে রাখতে হবে এই মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বাঙ্গালী মুসলমান যার সিংহ ভাগই ছিল অস্পৃশ্য নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মত যারা আমাদের আসল পূর্বপুরুষ। যাইহোক ১৯২০ এ বঙ্গদেশে শিক্ষামন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয় মুসলমানদের থেকে। বর্ণ হিন্দুদের মত বর্ণ মুসলমানও গড়ে উঠেছিল একিভাবে যা আলাদা করে আলোচনার প্রয়োজন নেই। এর বড় প্রমাণ আবুল কাশেম ফজলুল হক , যিনি শেরে বাংলা নামেও পরিচিত। ১৯২২ সালে যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় হক সাহেব এর বিরোধিতা করেছিলেন ।তবেও এটাও সত্যি বাংলাকে অনেক সাধারণ মুসলমানও হিন্দুর ভাষাই মনে করত। অবিভক্ত বাংলায় ১৯০১ সালে হিন্দুদের সাধারণ শিক্ষার হাড় ২১.৮% ও ইংরেজি শিক্ষার হাড় ৯.৭% সেখানে মুসলমানদের ছিল যথাক্রমে সাধারণ শিক্ষায় ৯.৭% এবং ইংরেজি শিক্ষায় ০.৮৫%। উচ্চশিক্ষায় অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ।
হিন্দুদের মাঝে জাতীয়তাবাদী চেতনা অনেক আগেই দানা বাঁধতে শুরু করেছিল সেই যখন ১৭৭৬ সালে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানারজি ‘ইন্ডিয়ান এ্যাসোসিয়েশন” নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন যা ছিল মূলত হিন্দুদের। পরে ১৮৮৫ সালে গঠিত হয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস যা সত্যিকারের রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কংগ্রেসের নেতারা সবাই বা বেশিরভাগ ছিলেন হিন্দু। এখানে বলা যেতে পারে যে মুসলিমদের মাঝে এমন কেউ আসলে ছিলেন না যে নেতা হতে পারেন, কারণ রাজনৈতিক সচেতন মুসলমান ই ছিলেন খুব কম । বাংলা ভাষী মুসলিমরা যখন লেখাপড়ায় এগিয়ে আসতে থাকলো তাদের নিজের পরিচয় নিয়ে তারা সংশয়ে পরে গেল কারণ বহিরাগত মুসলিমরা এ দেশে এসে বিয়ে শাদি করে স্থায়ী হয়েছিলেন বাধ্য হয়ে কারণ তখনকার দিনে দুর্গম পথ ধরে তাদের পক্ষে নারীদের সাথে করে আনা ছিল অসম্ভব এটা ইসলামিক শাসকরাও পারেন নাই। এর পরেও এই মুসলিম জনগোষ্ঠী যারা কিছুটা সাধারণ শ্রেণীর অর্থাৎ সুফি ,সাধক ,ধর্ম প্রচারক , ব্যবসায়ী এরা নিজেদের মাঝে ছোট জনগোষ্ঠী গড়ে নিলেন সাধারণ সেই কামার,কুমার,তাতি,ডোম এদের কাছেও মূলত অচ্ছুৎ ই রয়ে যায়। কাজেই শিক্ষার জন্য এগিয়ে আসা বাঙ্গালীদের সামনে যারা দৃষ্টান্ত হিসেবে উদয় হোল তারা উর্দুভাষী। আর যারা এই উর্দুভাষী তারা আসলে আর কিছুই না বর্ণবাদই মুসলিম । এই বর্ণ বাদী মুসলিমরা বাংলাকে কাফেরদের ভাষা হিসেবেই মনে করতেন। বাংলা ভাষার প্রতি বিরোধিতা সত্ত্বেও বিশ শতকের গড়ার দিকে শিক্ষিত মুসলমানদের অনেকে বাংলা শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন , কারণ মাতৃভাষায় শিক্ষা ব্যতীত ব্যাপক শিক্ষার হাড় বাড়ানো সম্ভব নয়।
বাঙ্গালী হিন্দুদের জাতীয়তাবাদী শক্তি দেখে ব্রিটিশ বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটিশ পশ্চিম বঙ্গের সাথে বিহার আর উড়িষ্যাকে জুরে দিয়ে নাম দিল বেঙ্গল আর পূর্ববাংলা আর আসাম নিয়ে গঠিত হয় পূর্ববঙ্গ প্রদেশ যার রাজধানী হয় ঢাকা। বেঙ্গলের হিন্দুর সংখ্যা ছিল মাত্র শতকরা বত্রিশ ভাগ আর পূর্ববঙ্গে মুসলিম ছিল শতকরা ৫৮ ভাগ। ফলে দু অংশেই হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে যায় । এটা হয় ১৯০৫ সালে। স্বাভাবিকভাবেই হিন্দুরা এর বিরোধিতা করে। বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলন শুরু হয়ে যায়, যা ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনের ইচ্ছাকে উস্কে দেয়। প্রাণ হারান ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী। খুব অল্প সংখ্যক বাঙ্গালী বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেন । বেশিরভাগই সমর্থন করেন। কারণ বঙ্গভঙ্গের কারণে ঢাকা রাজধানী হিসেবে মর্যাদা পাওয়ায় মুসলমানরা বা বাঙ্গালী মুসলিমরা কিছু সুবিধা পায় যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এর মাধ্যমেই ১৯০৬ সালে অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের ঠিক পরের বছর বঙ্গভঙ্গের প্রধান সমর্থক নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকায় “মুসলিম লীগ” প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এরমাঝেই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন এতটাই জোড় পায় যে তা রদ হয়ে যায় ১৯১২ সালে। বাঙ্গালীর একসাথে থাকার আকুতি এখানে ছিল কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা মুসলিম তারাও যা আবার নিম্নবর্ণের হিন্দু তারাও তা অর্থাৎ অচ্ছুৎ । এসব ভঙ্গে তাদের কি যায় আসে?। তারপরেও বঙ্গভঙ্গ রোধ হলে মুসলিমরা কস্ত পায় ,তাদের সান্ত্বনা দেবার জন্যই অনেক পরে হলেও ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করে সরকার।
এর মাঝে ভারত বর্ষে হিন্দু- মুসলিমের যে মুখোমুখি সংঘাতময় অবস্থান তা নিরসনের জন্য যে ব্যক্তিটি হাল ধরলেন তাঁর নাম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ । মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জন্ম গ্রহণ করেন ২৫ শে ডিসেম্বর ১৮৭৬ সালে। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয় মোহাম্মদ আলী জেনাভাই। জিন্নাহ ব্যারিস্টারি পড়া শুরুর আগে তাঁর নাম বদলে রাখেন মহম্মদ আলী জিন্নাহ। ব্যারিস্টারি পাশ করে জিন্নাহ ইংল্যান্ড থেকে ১৮৯৬ সালে বোম্বে বা বর্তমান মুম্বাই ফিরে এলেন । করাচীতে যাননি , যাওয়ার প্রয়োজন ও ছিল না । জিন্না কংগ্রেসে তাঁর রাজনীতি শুরু করলেও পরে একই সাথে মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং অবাক করার মত হলেও সত্যি যে একই সাথে তিনি কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের সদস্য থেকে যান। ভারতের মুসলমান এবং হিন্দুদের মাঝে ঐক্য সাধনের পদক্ষেপ জিন্নাই নেন লউখন সন্ধির বা প্যাক্ট এর মাধ্যমে যেখানে প্রথমবারের মত মুসলমানদের হিন্দুরা মেনে নেয় রাজনীতির দাবিদার হিসেবে। সরোজিনী নাই-ডু জিন্নাহকে হিন্দু – মুসলিমের সেতুবন্ধনের দূত হিসেবেও উল্লেখ করেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কংগ্রেসের সাথে ব্রিটিশের চুক্তি হয় কংগ্রেস ব্রিটিশকে যুদ্ধে সহায়তা দেবে এবং তাঁর বিনিময়ে ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা দিয়ে যাবে। গান্ধী নিজে সার্জেন্ট হয়ে ব্রিটিশের পক্ষে সৈন্য সংগ্রহ করেন । কিন্তু এর মাঝে ভারতের মুসলিমরা খেলাফত আন্দোলন শুরু করেন যা ছিল ইসলাম জাহানের একক খলিফার অধীনে মুসলিম সাম্রাজ্য যার খলিফা হবেন তুরস্কের খলিফা। এই খেলাফত আন্দোলন ভেস্তে যায় যখন যুদ্ধ শেষে কামাল আতা-তুরক ক্ষমতা নেন তুরস্কে। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ছাড়া বাকি সব মুসলিম নেতা মুসলিম লিগে ফিরে যান, মাওলানা কংগ্রেস যোগ দেন। কিন্তু এর মধ্যে যা হোল তা হচ্ছে ভারতের মুসলিমরা মুসলিম রাষ্ট্র চায়, এটি কংগ্রেসের বদ্ধমূল ধারনা হয়ে যায়। আসে ১৯২৮ সালের নেহ রু রিপোর্ট যেখানে জিন্নাহর লউখন প্যাক্টের মুসলিমদের জন্য মেনে নেওয়া বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ দাবী পাশ কাটান হয় বাদ দেয়া হয়। সূচনা হয় হিন্দু মুসলিম দন্ধের নতুন এবং চূড়ান্ত লড়াই। জিন্নাহ যেমন বিশ্বাস করলেন অখণ্ড ভারতে আর মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব নয় তেমনিভাবে কংগ্রেস বিশ্বাস করলো মুসলিমরা ভারতে ইসলামিক শাসন কায়েম করতে চায়। এখানে দন্ধ আসলে জিন্নাহ বনাম, কংগ্রেস কারণ জিন্নাহ তখন একাই মুসলিম লীগের কাণ্ডারি বা একক অপ্রতিদন্ধি নেতা। হিন্দু-মুসলিমের অনেক মিলনের চেষ্টাকে চূড়ান্ত ভাবে নস্যাৎ করে দেয় জিন্নাহর ডাকা ১৯৪৬ এর ১৬ই আগস্টের “ডাইরেক্ট একশন” যা স্মরণ কালের ভয়াবহ দাঙ্গার সূত্রপাত করে । এই হিন্দু- মুসলিম দাঙ্গায় শুধু কলকাতাতেই প্রথম দিনে ৩০০ শ র বেশী মারা যায় হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০। এই দাংগা থেমে থাকেনি।পরবর্তীতে কত মানুষ কত-ধরনের দাঙ্গায় প্রাণ দিয়েছে তাঁর হিসেব অন্য। উল্লেখ্য দাঙ্গা শুরুর আগের দিনও নেহ রু এবং জিন্নাহর মাঝে আলোচনা হয়েছিল কিন্তু কি আলাপ হয়েছিল জানা যায়নি ,কেউ মুখ খোলেননি। হিন্দু – মুসলিমের এই অবিশ্বাসের রাজনীতির ছিল বর্ণ হিন্দু এবং বর্ণ মুসলিমদের ক্ষমতার লড়াই,যার বলি হয়েছিল নিম্ন বর্ণের হিন্দু এবং মুসলিম রা ।
ধর্মের মাধ্যমে শোষণ আর নিপীড়নের যে ইতিহাস শুরু হয়েছিল ত্যার শুরু বাঙ্গালীর ইতিহাসের গরা থেকেই । বাঙ্গালী থেকে গিয়েছে নীচে। নিচু জাত হিসেবে। রাম রহীমকে কাছে টেনে নিলেও সেন আর খানের ক্ষমতা লড়াই রাম রহীমের নারীকে ছিন্ন করেছে। ১৯৪৭ এ যে দুটি দেশের জন্ম হয়েছে ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ই আগস্টে ভারত সেখানে রহিম এবং রামের অবস্থান এখনো একই যা ছিল দশ হাজার বছর পূর্বে।
এমনকি বর্তমান বাংলাদেশেও অবস্থা বদলায় নাই। ইসমাইলি সম্প্রদায়ের মুসলিম জিন্নাহ স্বাধীন পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু বাঙ্গালীর পুরব পাকিস্তানে প্রথমবারের মত সফরে এসেই বলে বসলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। পূর্বপাকিস্তানের বাঙ্গালীরা মেনে নিলো না। এরপরের ইতিহাস আমরা জানি। হোসেন শহীদ সোরহোয়ারদি কে করা হয়েছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু তিনি ছিলেন উর্দুভাষী একই অবস্থা খাজা নাজিমুদ্দিনের খাজা সাহেব পূর্বপাকিস্তানের মানুষ হলেও ছিলেন উর্দুভাষী। আরেক নেতা আবুল হাশিম
ছিলেন উর্দুভাষী। বাংলাভাষী ফজলুল হক উর্দুভাষীদের সুরেই কথা বলেছেন খাজা নাজিমুদ্দিন কে খাটি বাঙ্গালী বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন।
প্রকৃত বাঙ্গালী নেতার আবির্ভাব হয় অনেক পরে। ১৯২০ সালে যার জন্ম শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিব এর রক্তে কিছুটা বহিরাগতদের রক্ত থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু তাঁর প্রভাব এতই কম ছিল যে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে নেমে আসেন । বাঙ্গালী সেই হাজার বছরের বাঙ্গালীর মুক্তির দায়িত্ব যিনি একাই কাঁধে তুলে নেন। এর মাঝে কিছু বাঙ্গালী নেতা ছিলেন তাদের অন্যতম মাওলানা ভাসানি, কিন্তু ভাসানি ছিলেন লক্ষ্যহীন মানুষ। ১৯৪৯ এ পাকিস্তান কে অয়ালাইকুম আসসালাম জানালেও কাজের কাজ কিছু হয় নাই। পিকিং পন্থি মাওলনা লুঙ্গি পরে চীন সফর করলেও দাড়ি টুপি পরতেন এবং ধর্মভীরু ছিলেন। মাওলানার গোঁজামিল মার্কা রাজনীতিতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। যদিও মাওলানার দেশ প্রেম এবং সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা সবার ই আছে।
প্রকৃত বাঙ্গালীর মুক্তির কাণ্ডারি হয়ে আসেন শেখ মুজিব। মুজিবের দেয়া ৬ দফার মাধ্যমে বাঙ্গালীর মুক্তির আন্দোলন শুরু । ৬ দফায় ছিল ১) লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র গঠন ২) কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র ৩) প্রদেশের নিজস্ব মুদ্রা থাকবে ৪) কর আরোপ এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা থাকবে প্রদেশের ৫) দেশের দুই অংশের বৈদেশিক আয়ের দুটি আলাদা হিসেব থাকবে ৬) পুরব পাকিস্তানের নিজস্ব আঞ্চলিক বা আধা সামরিক বাহিনী থাকবে। এই ছয় দফা পাকিস্তানের কোন অংশের কোন নেতারই সমর্থন লাভে বার্থ হয়। মুজিব এককভাবে এই ৬ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং দেশদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ৬৯ এর গন অভ্যুথ্হানের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করেন । ১৯৭০ এর নির্বাচনে মুজিবের দল আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ লাভ করলেও পশ্চিম অংশের নেতা ভুট্টা দেশের দুই অংশে দুই সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন যা ছিল দেশ ভাঙ্গার নামান্তর মানুষ এর বিরোধিতা শুরু করলে কেন্দ্রীও পাকিস্তানি সরকার মুজিবের হাতে ক্ষমতা না দেয়ার যে ষড়যন্ত্র করে তার বিরুদ্ধে মুজিব রুখে দাঁড়ান এবং পূর্বপাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করে বাংলাদেশ নামকরণ করেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে মুজিবের এই আপোষহীন সংগ্রামের কারণ আমাদের বুঝতে হবে। মুজিব ৬ দফার সাথে বেইমানী করলে বাংলাদেশের জন্ম হত না। বেইমানী করাটাই ছিল স্বাভাবিক কারণ তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন যা সোরহোয়ারদি হয়েছিলেন,তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বলেছিলেন,তার এ পদ লাভের কারনে পূর্বপাকিস্তানের শতকরা ৯৮ ভাগ দাবী পূরণ হয়ে গেছে,কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং গৃহবন্দি হন। মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন পশ্চিমারা আমাদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কখনই দেবে না,তারা পুরনো খেলাই খেলবে অর্থাৎ ক্ষমতার সামান্য ভাগ দেবে , মুজিব বুঝেছিলেন শাসক সুবিধার খুদ কুড় দিলেও সম্মান দেবে না। আগের সব নেতারা তথাকথিত নিম্ন- বর্ণ থেকে উঠে এসে শাসকের খুদ কুড়তেই সন্তস্ট থেকেছেন।মুজিব এর ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন।আর মুজিবের সমালোচনা? সে আরেকদিনের জন্য থাকল।

No comments:

Post a Comment