Wednesday 6 April 2016

বাংলাদেশে বই পড়ার আন্দোলন ----------- তপন রায়

এ দেশে বই ক্রেতা/পাঠক তৈরির সাথে বাংলা একাডেমীর বই মেলার প্রসঙ্গ এসে পরে। উৎসব মুখর পরিবেশে বর্তমানে বই কেনা এবং বই পাঠ করার সূচনার সাথে তিন জন ব্যক্তির নাম অবশ্য-স্মরনীয়, তাঁরা হলেন – মুক্তধারার প্রকাশক চিত্ত রঞ্জন সাহা, এদেশে বই পড়াকে আন্দোলনে রুপদানকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইদ এবং কথা মালার অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর হুমায়ুন আহমদ যিনি তাঁর জীবদ্দশায় কিংবদন্তিতে পরিনত হন ।
পুথিঘর প্রকাশনা ঘরের স্বত্বাধিকারী বাবু চিত্ত রঞ্জন সাহা সৃজনশীল সাহিত্যের অনুরাগ হতে সমান্তরাল প্রকাশনা ঘর মুক্তধারার সূচনা করেন। ৭০ এর দশকে একমাত্র তাঁকেই দেখেছি এ দেশে পাতায় পাতায় চিরন্তন সাহিত্যের কবি সাহিত্যিকদের ছবি সহ ব্যতিক্রমী ক্যালেন্ডার বের করতে, যখন ক্যালেন্ডারে দেব/দেবীর ছবি অথবা রমণীর ছবি ই শুধু প্রচলিত ছিল । ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমীর একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান মালা চলাকালীন সময়ে তিনি একাডেমীর সামনে তাঁর প্রকাশিত মাত্র ৩৩ টি বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। এর পর হতে প্রতি বৎসর ই অন্যান্য প্রকাশকরা এই একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান মালা চলাকালীন সময়ে বাংলা একাডেমীতে বই বিক্রয়ের উদ্যোগে শরিক হন।
কালক্র‌মে ১৯৭৮ এ একা‌ডেমী প্রাঙ্গ‌নে বই মেলার আ‌য়োজ‌নের শুরুর মধ্য দি‌য়ে ১৯৮৪ তে তা ‘একুশে বই মেলা’ না‌মে ঘো‌ষিত হয়। এই মেলা এখন একাডেমীর চত্তর ছাড়িয়ে দোয়েল চত্তর হতে ‌সোরওয়ার্দ্দী উদ্যান হ‌য়ে শাহবাগ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েও স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইদ তাঁর স্বভাবজাত গালে টোল পরা iconic হাসিমুখে বি টি ভি তে পরিচ্ছন্ন বিনদন মুলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'সপ্তবর্না' এবং 'চতুরঙ্গ' সঞ্চালনা/প্রযোজনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় বই পড়াকে জনপ্রিয় করার জন্য গ্লামারাস রুপালী মাধ্যম ত্যাগ করে ১৯৭৮ সালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র স্থাপন করেন যা আজ মহীরুহে পরিনত। লক্ষ লক্ষ স্কুল/কলেজ ছাত্রের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত।
৮০’ র দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত কবিতা ছাড়া গদ্য সাহিত্যের বাজার ছিল ভারতীয় বইয়ের দখলে। হুমায়ুন আহমদ ইতোপূ‌র্বে 'ন‌ন্দিত নর‌কে' এবং 'শংখ নীল কারাগা‌র' লি‌খে সু‌নি‌র্দিষ্ট পাঠক এবং লেখক/সমা‌লোচক মহ‌লে ভা‌লো প‌রি‌চি‌তি পে‌য়ে‌ছেন ঠিক, কিন্তু টি ভি নাট‌ক নির্মা‌নের কল্যা‌নে পাঠক সংখ্যার প‌রি‌ধি ব্যাপকভা‌বে বৃ‌দ্ধি পায়। এর পর এ‌কে এ‌কে হিমু, মি‌সির আলী , পাঠক সংখ্যা ও জন‌প্রিয়তার গ্রাফ প্রায় ৯০ ডিগ্রী কো‌ণে ঊর্ধ্বমুখী রূপ লাভ ক‌রে। তঁার পরিপূর্ণ আবির্ভাবে ভারতীয় বইয়ের দাপ‌টের অবসান ঘ‌টে। পাঠকরা বাংেলা‌দে‌শের লেখকদের প্রতি আস্থা খোঁজে পান। বিশেষ শ্রেণীর পাঠকের স্থলে সকল শ্রেণীর পাঠকের নিকট কথা সাহিত্যের জনপ্রিয়তার স্বর্গ দ্বার উন্মোচিত হয় এই প্রবাদপ্রতিম লেখকের লেখনির দ্বারা। শরত চন্দ্রের পর আর কারো লিখা এভাবে সাধারণ পাঠক শ্রেণীর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে কি না, এ বিষয়ে খুব একটা দ্বিমত নেই।
একুশে বইমেলার শুরুতে এই তিন কর্ম বীর মহাপুরুষের অবদানের কথা পরম শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করছি।

দ্ধতির সাথে ছোট হতেই যে পরিচয় তা আসলেই অত্যন্ত নস্টালজিক।
জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রবল বর্ষণে পানি যখন স্রোতে বইতে শুরু করে, ডিমওয়ালা মাছ তখন স্রোতের বিপরীতে নির্ভয়ে চলে। যদিও পলো দিয়েই এই মাছ ধরা হয়, তখন শুধু হাতে ও মাছ ধরার স্মৃতি আছে। কই মাছকে তো বৃষ্টির সময় উঠানেও চলে আসতে দেখেছি। দুই কানকা দিয়ে বৃষ্টির সময় কই মাছের ঢাল বেয়ে উপরের দিকে চলার দৃশ্য তো দেখার মত। জ্যৈষ্ঠ মাসের এই মাছকে বলে ‘উজাইয়া মাছ’, উজানে চলে বলে এই নাম।
ভোর বেলা মাঠে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে যেয়ে দেখে রাতের বেলার বৃষ্টির পানি উঁচু জমির আল ভেঙ্গে প্রবল বেগে নামছে আর ঝাকে ঝাকে ছোট মাছ উজাচ্ছে। সাথে গামছা আর লোটা ছাড়া কিছুই ছিল না। এই গামছা দিয়ে লোটা ভর্তি মাছ নিয়ে বাসায় ফিরেছে, এটা আমার চোখের দেখা।
শ্রাবণ ভাদ্র মাসে পানি টই টুম্বুর, বাঁশের তৈরি ফাঁদ, যার আঞ্চলিক নাম ‘চাই’, এতে শামুক ভাঙ্গা রেখে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। ভাঙ্গা শামুকের গন্ধে মাছ চাই-এর ভেতর ঢুকলে আর বেরুতে পারে না। চাই এর মাছে শামুকের গন্ধ থাকে বলে বাজারে এর চাহিদা কম।
আশ্বিন মাসে পানিতে টান ধরে। গভীর রাত্রে নৌকার গলুইতে বড় কুপি/হ্যাজাক লাইট রেখে মাছ-শিকারী কোচ হাতে শ্যেন দৃষ্টিতে চার দিকে তাকায়। নৌকা চলে আস্তে আস্তে, হাওরের তলদেশ তখন পরিষ্কার, পানি থাকে স্থির। তাই বিচরন কারী রউ (রুই), কাতলা (কাতল), কাইল্যারা (কালি বাউশ), সর পুঁটি এবং চিতল তখন শিকারির সহজ লক্ষ্য বস্তু। লাইটের আলোর কারনে মাছ ও তখন ভ্যাবাচাকা খেয়ে কিছু ক্ষণের জন্য স্থির হয়ে যায়। তাই মাছ শিকার তখন বেশ সহজ যদি নিশানা ঠিক রাখা যায়। জানা না থাকলে চিতল মাছের বাঁকানো পিঠ দেখে সাপ বলে ভ্রম হয়। আমাদের আশে পাশে শনির হাওর, কাইল্যা গুডা হাওরে এখনো রাতে কোচ দিয়ে মাছ শিকার জনপ্রিয়। আলো ব্যবহার করে এই মাছ ধরা, তাই এই মাছকে বলা হয় ‘আউল্লারা’ মাছ।
চৈত্র মাসে ছোট ছোট ডোবা বাছাই করে থালা আর বাটি দিয়ে সেচে মাছ ধরা ছিল কিশোরদের প্রিয় শখ। এমনি এক ডোবায় কাদায় লুকানো বড় বাইম মাছ তুলার পর হাতে ধরা বোরা সাপ দেখতে পেয়ে ছুরে ফেলে দেয়ার অভিজ্ঞতা ও আছে।
মৌলভীবাজার জিলার কুশিয়ারার তীরবর্তী শেরপুরে প্রতি বৎসর মাঘ মাসের পহেলা তারিখে মাছের মেলা (শুধু মাছ) হয়। সম্ভবত বাংলাদেশের এই জাতীয় এক মাত্র এবং বৃহত্তম মাছের মেলা। সৌখিন মাছ ক্রেতারা ঢাকা থেকে সরাসরি এই মেলায় গাড়ি করে মাছ কিনতে যান।
ঋতু ভেদে মাছের স্বাদের তারতম্য ঘটে। তাই বিশেষ ঋতুতে বিশেষ মাছের চাহিদা একেবারেই কমে যেতো। পৌষ মাসে বোয়াল, গুসি/ঘাঘট (আইর) এর স্বাদ অতুলনীয়। চৈত্র মাসে বোয়াল মাছের ক্রেতা পাওয়া দুষ্কর হত। যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে এখন আর চাহিদার রকম ফের হয় না।
ছবির মাছ গুসি কাটা (গুসি আইর) , গোলাইয়া (গোলসা), সাইব্লা (চাবিলা) এবং পাইব্বা (পাব্দা) ঢাকার মুহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট থেকে কেনা।

No comments:

Post a Comment