Wednesday 27 April 2016

এখন পশ্চিমবাংলা- বুধসন্ধ্যার আড্ডা - অসিত রায়

উল্টোডাঙ্গায় বাপির চায়ের দোকানে বুধসন্ধ্যার আড্ডা। কঠিন দুর্বোধ্য বই পড়া অরুণ লাল চায়ে চুমুক দিয়ে সূচনা করল, তাত্বিক কথা আজ থাকঃ তোমরা বল এতদিন যাবত যত মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবাংলায় এসেছেন তাদের মধ্যে যাঁদের কথা বলা যায় তাঁরা কারা? সমবেত উত্তর-কেন? বিধান রায়, জ্যোতি বসু, মমতা? প্রফুল্ল ঘোষ,সেন, সিদ্ধার্থ,অজয় ,বুদ্ধকে বাদ দিলে?
স্বরাজ- কেনও?বিধানের আমলে দুর্গাপুর,চিত্তরঞ্জন,কল্যানী,হরিনঘাটা,সল্ট লেক?
অসিত- সেই বিধানই আবার ১৯৫৭ তে পশ্চিমবাংলাকে বিহারের সঙ্গে জুড়ে দেবার বাংলা বিরোধী চক্রান্ত করেছিশে।বিপুল প্রতিবাদে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। কাজটা তিনি করেছিলেন নেহরুর পরামর্শে। তবে জহরকে ধরে তিনি মানভুম কে দু টুকরো করে পশ্চিমবাংলার সঙ্গে জুড়েছিলেন । কিষানগঞ্জ থেকে এক টুকরো ছিঁড়ে এখানে লাগিয়েছিলেন উত্তরের সাথে দক্ষিণকে যোগ করতে।
অরুণ- না এগুলি বিষয় নয়। বেশ, জ্যোতিবাবুর মুকুটের পালক কি কি?
বাপি- রক্ত দিয়ে গড়া বক্রেশ্বর? হলদিয়া পেট্রো? বর্গা রেকর্ডিং ? আর কি? কেন , চূড়ান্ত দলতন্ত্র দিয়ে সমস্ত পার্টি কর্মীদের বেকারত্ব ঘোচানো? এবং লোকাল কমিটির একচ্ছত্র আধিপত্য ? অজস্র গণসঙ্ঘঠন দিয়ে এখানকার সমাজ-রাজনীতিকে অক্টোপাসের মত ঘিরে ফেলা?
অরূপ- বুদ্ধকে তোমরা আলোচনার বাইরে রাখলে কেন ? তিনি তো চেষ্টা করেছিলেন সামান্য টাকায় কৃষকের জমি নিয়ে টাটাকে দিয়ে ন্যানো কারখানা খুলতে? তা তোমাদের দয়ায় তা হল কই?
অসিত- মমতার কাছে প্রত্যাশার বহরটা তো বেশ বড়ই ছিল? তিনি কি দিলেন?
অরুণ- একটা কথা দিয়ে শুরু করি । কর্পোরেট ওষুধ কম্পানী ও লোভী ডাক্তাররা মিলে স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাকে এবং গরিব মানুষকে ছিবড়ে করে দিচ্ছিল।মমতা সরকারি হাসপাতাল গুলিতে জেনেরিক নামে ওষুধ দেওয়ার ফরমান দিয়ে ওষুধের দাম বিপুল কমে রেখে দিয়ে নতুন পথ দেখালেন ।এটা কি কম অ্যাচিভমেন্ট ?আর কাদের জন্য? গরিব মানুষদের জন্য নয় কি?
বাপি- দেখুন, জনকল্যাণমূলক প্রকল্প দিয়ে সামান্য হলেও মমতা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি তো পৌঁছোতে পারছেন! কন্যাশ্রীর মত আর অনেক প্রকল্পর মাধ্যমে অল্প আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েরা উপকৃত হয়েছে!কিন্তু খবরের কাগজ কি এক লাইনও এর জন্য খরচ করেছে? আর দু টাকার চাল?
ভোলা- জেলায়,জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়,মেডিকাল কলেজ,হাসপাতাল, পলিটেকনিক কে করল ?শুধু গালি দিলেই হবে?
অরূপ- ওগুলো কিছুদিন বাদেই মুখ থুবড়ে পড়বে। 
অরুণ -এখন পশ্চিমবাংলায় ৯৭ শতাংশ মুসলিম ওবিসি সংরক্ষণের সুযোগ নিতে পারে, এটা কম কথা হল?
লেলো- তাই ত ওদের এত বাড় বেড়েছে।
ভোলা- কেন খাগড়াগড়,কালিয়াচকে দেখলেন না?
বাপি- ওদিকে দেখুন, বিমল গুরুং কে টাইট দিতে কি রকম লেপচা,তামাং,ভুটিয়া এই সব জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা উন্নয়ন বোর্ড করে দিলেন! কর আদায়ও অনেকটা বেড়েছে।
অসিত - এবার কিছু নিমতেতো কথা বলুন! সারদা,নারদ স্টিং এগুলিতে মানুষ কি বিচলিত ? সব পারটি অবশ্য টাকা নেয়। কিন্তু জনগণ জানতে পারে না। ওদের ক্ষে্রে কেন এটা হোল?
অরুণ- আমি একটু অন্য কথা বলতে চাই । কাজ নেই, চাকরি নেই,নতুন কর্মসংস্থানের নামগন্ধ নেই। তাই রাজনৈতিক দাদাগিরির উপর নির্ভরশীল জীবিকার প্রসার এই আমলে হুহু করে বেড়েছে ।
অরূপ- সিপিএমের আমলেও দালালি,ঠিকেদারি, সিন্ডিকেট ব্যাবসা সবই ছিল।কিন্তু পার্টির একটা নিয়ন্ত্রণ ও ছিল। বাইরের কেউ খুব একটা জানতে পারত না।
অসিত- তাই দেখা যাচ্ছে জঙ্গল রাজের লাগামহীন দৌরাত্ম । তাই যতদিন বাংলার স্বার্থবাহী নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ দিল্লির চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতির উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারার সম্ভাবনা তৈরি করছে ততদিন রুপোলী রেখা দেখা অসম্ভব , স্বৈরাচারী পদ্ধতি তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এমনকি নির্বাচনে তিনি জিতলেও । আজ চতুর্থ লাল চায়ে আড্ডার অবসান হোক।

No comments:

Post a Comment